আগরতলা, ৬ অক্টোবর: মহা অষ্টমীর রাত যখন ত্রিপুরার উত্তর জেলাজুড়ে পুজোর আনন্দে মেতে উঠেছিল মানুষ, ঠিক সেই সময়েই ঘটে গেল এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা, যা মুহূর্তের মধ্যেই আনন্দমুখর পরিবেশকে শোকে আচ্ছন্ন করে দেয়। ঘটনাটি ঘটে ধর্মনগরের দীঘলবাঁক এলাকায়, শনিবার রাত প্রায় সোয়া এগারোটার সময়। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে দুর্ঘটনার সেই হৃদয়বিদারক দৃশ্য।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধর্মনগর ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন উপেন্দ্রনাথ লেনের বাসিন্দা অভিজিৎ দেবনাথ ও তাঁর পুত্র অবিরুপ দেবনাথ ওই রাতে দীঘলবাঁক এলাকার এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় পিছন দিক থেকে দ্রুতগতিতে আসা একটি ওয়াগন আর গাড়ি তাঁদের সজোরে ধাক্কা মারে।
ধাক্কার তীব্রতায় পিতা–পুত্র প্রায় ২০ মিটার দূরে ছিটকে পড়েন। স্থানীয়রা সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এসে তাঁদের উদ্ধার করে গুরুতর জখম অবস্থায় ধর্মনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁদের শিলচর মেডিকেল কলেজে রেফার করা হয়।
দীর্ঘ পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে অবিরুপ দেবনাথ না ফেরার দেশে পাড়ি দেন। তাঁর বাবা অভিজিৎ দেবনাথ বর্তমানে বহিঃরাজ্যের এক হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রবিবার অবিরুপের নিথর দেহ যখন ধর্মনগরের নিজ বাড়িতে পৌঁছায়, তখন শোকের ছায়া নেমে আসে গোটা শহরে। পরিবার-পরিজন ও প্রতিবেশীদের কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবেশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটি ধর্মনগরের নেতাজী পল্লির বাসিন্দা ৩৪ বছর বয়সি সৌভিক নাথের নামে নিবন্ধিত। ইতিমধ্যেই গাড়িটি আটক করা হয়েছে এবং ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ধর্মনগর থানার পুলিশ যানবাহন আইনে পথদুর্ঘটনার মামলা রুজু করে সৌভিক নাথের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দুর্গাপূজার সময় শহরজুড়ে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর প্রবণতা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পায়। তাঁরা প্রশাসনের কাছে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা আর না ঘটে।
অবিরুপ দেবনাথের অকাল মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ সমগ্র ধর্মনগর শহর।
উৎসবের রাতের হাসি ম্লান হয়ে গেছে এক তরুণের নিঃশব্দ প্রয়াণে।

