আগরতলা, ৩০ সেপ্টেম্বর: প্রতি বছরের মতো এবছরও দুর্গোৎসবের অষ্টমীতে ধলেশ্বর রামকৃষ্ণ মিশনে আয়োজিত হল কুমারী পূজা। মহাঅষ্টমীর এই বিশেষ পূজা দেখতে আজ সকাল থেকেই ভিড় জমায় হাজার হাজার ভক্ত ও দর্শনার্থী। চারিদিকে উৎসবের আবহ, ঢাকের বাদ্যি, ধূপের গন্ধ আর দেবী বন্দনায় মুখর হয়ে ওঠে মিশন প্রাঙ্গণ।
এবছরের কুমারী মা ছিলেন আগরতলার রাণীবাজার এলাকার বাসিন্দা স্বর্ণমিতা চক্রবর্তী। বয়স মাত্র ৭ বছর ১১ দিন। সে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। তাঁকে পরম শ্রদ্ধা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দেবীরূপে পূজা করা হয়। আরও জানা গিয়েছে, তার মা তথা আইনজীবী সোনালী চক্রবর্তী জানান এক সময় তিনিও কুমারী রূপে পূজিতা হয়েছিলেন। সোনালী চক্রবর্তীর স্বামী সদরের অতিরিক্ত মহকুমা শাসক রামেশ্বর চক্রবর্তী।
পূজার শুরু হয় সকালে বিশেষ মন্ত্রোচ্চারণ ও বর্ণাঢ্য আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। কুমারী স্বর্ণমিতাকে স্নান করিয়ে, নতুন বস্ত্র পরিয়ে, গয়নায় অলংকৃত করে দেবীর আসনে বসানো হয়। এরপর মন্দিরের পুরোহিত মন্ত্রপাঠ ও নির্দিষ্ট বিধি অনুসারে পূজা সম্পন্ন করেন। দেবীকে নিবেদন করা হয় ফল-মিষ্টি, প্রসাদ ও পুষ্পাঞ্জলি।
একজন পুরোহিত জানান, কুমারী পূজার শাস্ত্রীয় ভিত্তি অত্যন্ত গভীর। পুরাণ অনুযায়ী, এক সময় শক্তিশালী অসুর কোলাসুর স্বর্গ ও মর্ত্যলোক দখল করে নেয়। তখন দেবতারা দেবী মহাকালীর শরণাপন্ন হন। দেবী কুমারীরূপে পুনর্জন্ম নিয়ে কোলাসুরকে বধ করেন এবং ধরণীকে রক্ষা করেন। সেই থেকেই কুমারী পূজার প্রচলন শুরু হয়। এ পূজা শুধু ভক্তির প্রকাশ নয়, এটি নারীশক্তির প্রতি সম্মানজ্ঞাপনও বটে।
ত্রিপুরা জুড়ে এখন শারদ উৎসবের চরম আনন্দময় সময় চলছে। প্রতিটি পাড়া, মহল্লা ও মন্দিরে চলছে দেবী দুর্গার আরাধনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং মেলা। ধলেশ্বর রামকৃষ্ণ মিশনের এই কুমারী পূজা সেই উৎসবেরই এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।

