চেন্নাই, ২৭ সেপ্টেম্বর : তামিলনাড়ুর কারুর জেলায় অভিনেতা ও তামিলগা ভেট্ট্রি কাজহাগাম নেতা বিজয়ের রাজনৈতিক সমাবেশে ভয়াবহ হুড়োহুড়ির ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সন্ধ্যায় কারুরের ভেলুসামিপুরম এলাকায় আয়োজিত এই সমাবেশে ভিড়ের চাপে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৩ জন। আহত হয়েছেন অনেকে, যাদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। এদিনের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, রাত প্রায় ৭:২০ টার দিকে শুরু হওয়া সমাবেশ চলাকালীন হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় সারা এলাকা অন্ধকারে ঢেকে যায়। মুহূর্তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং লোকজন ছোটাছুটি শুরু করে। অতিরিক্ত ভিড় ও পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের অভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
কারুর সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহতদের ভর্তি করা হয়েছে। ছয়জন শিশুসহ মোট ৩০ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, তিনজন শিশু আইসিইউতে রয়েছে এবং কয়েকজনের অবস্থা সংকটজনক।
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম.কে. স্টালিন রাতেই ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন এবং জরুরি পদক্ষেপের নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশে শিক্ষামন্ত্রী অনবিল মহেশ পইয়ামোঝি ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মা. সুব্রমানিয়ান দ্রুত কারুরে পৌঁছে যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সুপারিনটেনডেন্টের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রাথমিক উদ্ধারকাজে অ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশ বাহিনী বাধার সম্মুখীন হয়। জনতার চাপে এবং নির্গমনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক অভিভাবককে অজ্ঞান হয়ে পড়া শিশুকে কাঁধে করে বের করতে দেখা যায়।
দুর্ঘটনার ঠিক আগে বিজয় তাঁর ভাষণে স্থানীয় বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন—অবৈধ বালি খনন, খনিজ চুরি এবং নাগরিক পরিকাঠামোর দুর্বলতা নিয়ে সরব হন। তিনি রাজ্যের বর্তমান শাসক ডিএমকে-র কড়া সমালোচনা করেন এবং বলেন, “আগামী ছয় মাসের মধ্যেই পরিবর্তন আসবে।” এরপরই ঘটে এই দুর্ঘটনা।
এই দুর্ঘটনার পরও বিজয়ের দল তামিলগা ভেট্ট্রি কাজহাগামের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি। নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি এবং জনসমাবেশ ব্যবস্থাপনার উপর প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারুর সরকারি হাসপাতাল এখন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসক ও নার্সরা রাতভর আহতদের চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। সাবেক তামিলনাড়ু মন্ত্রী ভি. সেন্টিল বালাজি হাসপাতালে গিয়ে আহতদের খোঁজখবর নেন এবং চিকিৎসা পর্যালোচনা করেন।
এই মর্মান্তিক ঘটনা রাজ্যজুড়ে শোক ও উদ্বেগের ছায়া ফেলেছে। জনগণের প্রশ্ন, এত বড় সমাবেশে কেন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও পরিকল্পনা ছিল না? তদন্তের দাবি তুলছেন অনেকে।
তামিলনাড়ুর কারুরে একটি রাজনৈতিক সমাবেশ চলাকালীন ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করাছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সামাজিক মাধ্যমে এক বার্তায় তিনি বলেন, কারুরে একটি রাজনৈতিক সমাবেশ চলাকালীন যে দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। যাঁরা তাঁদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাঁদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। এই কঠিন সময়ে তাঁদের দৃঢ়তা কামনা করছি। আহত সকলের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।

