জাতিসংঘে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে ভারতের তীব্র প্রতিবাদ, হিন্দুত্ববাদ ও যুদ্ধজয়ের দাবি ঘিরে তোলপাড়

নিউ ইয়র্ক, ২৭ সেপ্টেম্বর: জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বক্তব্য ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত। পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীর যুদ্ধজয়ের দাবি, “হিন্দুত্ব-চালিত চরমপন্থা”র অভিযোগ এবং কাশ্মীর প্রসঙ্গে মন্তব্যকে “অযৌক্তিক নাটকীয়তা” বলে অভিহিত করেছে ভারতের স্থায়ী মিশনের প্রথম সচিব পেতাল গহলট। তিনি বলেন, “যদি ধ্বংস হওয়া রানওয়ে ও পুড়ে যাওয়া হ্যাঙ্গারকে জয় মনে হয়, তবে পাকিস্তান সেই জয় উপভোগ করুক।”

শাহবাজ শরিফ জাতিসংঘে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ভারতের সাম্প্রতিক অপারেশন ‘সিন্দূর’-কে “নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের উপর হামলা” বলে চিত্রিত করেন এবং দাবি করেন, পাকিস্তান আত্মরক্ষার অধিকারবলে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের আকাশে অহংকারের আড়ালে আসা শত্রুকে অপমানজনকভাবে ফিরিয়ে দিয়েছি।” একইসঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনী সাতটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে বলেও দাবি করেন তিনি, যদিও ভারতীয় বায়ুসেনা স্পষ্ট করেছে যে তারা পাঁচটি পাকিস্তানি জেট এবং একটি AEW&C বিমান ধ্বংস করেছে।

শাহবাজ শরিফ আরও বলেন, পহেলগাঁও হামলার পর ভারতের পক্ষ থেকে সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং “যুদ্ধ ঘোষণার সমান।” এ নিয়ে তিনি জাতিসংঘে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “পাকিস্তানের জনগণের পানি ব্যবহারের অধিকার রক্ষায় আমরা কোনো আপস করব না।”

কাশ্মীর প্রসঙ্গে শাহবাজ বলেন, “আমি কাশ্মীরবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই, পাকিস্তান তাদের পাশে আছে।” সেইসঙ্গে তিনি ভারতের বিরুদ্ধে “হিন্দুত্ববাদী চরমপন্থা গোটা বিশ্বের জন্য হুমকি” বলেও মন্তব্য করেন। তার এই বক্তব্যের একটি ভিডিও ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

ভারতের তরফে পেতাল গহলট পাল্টা কটাক্ষ করে বলেন, পাকিস্তান একদিকে যেমন ওসামা বিন লাদেনকে দশ বছর ধরে আশ্রয় দিয়েছে, অন্যদিকে আবার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দাবি করে। তিনি বলেন, “পাকিস্তানের মন্ত্রীরাই সম্প্রতি স্বীকার করেছেন, তারা কয়েক দশক ধরে সন্ত্রাসবাদী ক্যাম্প পরিচালনা করছে।”

শাহবাজ শরিফ যেখানে “সমন্বিত ও ফলপ্রসূ সংলাপ”-এর আহ্বান জানিয়েছেন, পেতাল গহলট তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “যতক্ষণ না পাকিস্তান সমস্ত সন্ত্রাসী শিবির বন্ধ করে এবং ভারতের চাওয়া সন্ত্রাসীদের প্রত্যর্পণ করে, ততদিন সংলাপ সম্ভব নয়।”

এই বিবৃতির মধ্য দিয়ে ভারত পাকিস্তানকে একহাত নিয়ে আবারও জাতিসংঘের মঞ্চে জোরালো বার্তা দিল যে, সন্ত্রাস ও মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান অবিচল।