আগরতলা, ২৬ সেপ্টেম্বর : শারদোৎসবকে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে প্রস্তুত রয়েছে রাজ্য প্রশাসন। আজ সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটাই জানালেন রাজ্য পুলিশের মহা নির্দেশক অনুরাগ ধানকর।
সামনেই বাঙালির সবথেকে বড় উৎসব শারদীয়া দুর্গোৎসব। তাকে কেন্দ্র করে গোটা রাজ্যের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে তৎপর রয়েছে রাজ্য প্রশাসন। আজ এক সাংবাদিক সম্মেলনে শারদ উৎসবের সময়ে রাজ্যের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির চিত্র নিয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মিলিত হয়েছেন রাজ্য পুলিশের মহা নির্দেশক অনুরাগ ধানকর।
তিনি জানান, গোটা রাজ্যে নির্বিঘ্নে শারদ উৎসব সম্পন্ন করার জন্য অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে জেলা পুলিশ, ট্রাফিক ইউনিট, টিএসআর বাহিনী এবং মহিলা পুলিশ। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর আরো বেশি মাত্রায় প্রশাসনিক আধিকারিককে শারদ উৎসবের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে।
পুলিশ মহানির্দেশক জানান, এবছর প্রায় ২৯৬৫ টি দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে গোটা রাজ্যে। গতবছর ২৭৫০ টি পূজা মন্ডপের আয়োজন করা হয়েছিল রাজ্যব্যাপী। অর্থাৎ এবছর প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে পূজা আয়োজক এর সংখ্যা। শারদ উৎসবকে কেন্দ্র করে সব ধরনের জরুরী পরিষেবাকে তৈরি রাখা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস, পি ডব্লিউ ডি, বিদ্যুৎ দপ্তর, টেলিফোন বিভাগ, পুলিশ স্টেশন সহ শব্দ দূষণের জন্য এসডিপিও থেকে বিশেষ অনুমতিপত্র সংগ্রহের জন্য প্রত্যেক ক্লাব তথা পুজো উদ্যোক্তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে ৭৫ ডেসিবেলের উপরে কোথাও সাউন্ড বক্স বাজানো যাবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে অতিরিক্ত বাহিনী নিয়োগ করা হচ্ছে। শনিবার থেকেই তারা শহরের বিভিন্ন জায়গায় ভিড় নিয়ন্ত্রণ সহ সাধারণ জনগণকে পরিষেবা প্রদান করবেন। পুলিশ মহা নির্দেশক জানিয়েছেন, এবছর ৬৫৫০ জন টিএসআর জওয়ান নিরাপত্তার দায়িত্বে মোতায়ন করা হয়েছে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৬০০০। এছাড়াও এবার ৩৮০ জন এডিশনাল পুলিশ ও ৯২০ জন প্রশিক্ষণরত পুলিশ কর্মীদের দুর্গোৎসবের নিরাপত্তার কাজে নিয়োগ করা হবে। সর্বমোট ৭৭৫০ জন অতিরিক্ত বাহিনী গোটা রাজ্যে নিরাপত্তার দায়িত্বে মোতায়েন থাকবেন।
নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে ২১৫টি মোবাইল পেট্রোলের গাড়ি। এছাড়াও ৩২০ টি সিসিটিভি ক্যামেরা নজর রাখবে প্রত্যেকটি মুহূর্তের। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ২১৬ টি, অর্থাৎ এই বছর সিসিটিভির নজরদারি আরব বৃদ্ধি করা হয়েছে। যাতে করে প্যান্ডেল গুলিতে ভিড় নিয়ন্ত্রণসহ যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়। এছাড়াও পুজো উদ্যোক্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন প্রত্যেকটি পুজো মণ্ডপে সিসিটিভির ব্যবস্থা করা হয়। যাতে করে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
ইতি মধ্যেই সকল পূজা উদ্যোক্তাদের সঙ্গে প্রশাসনিক আধিকারিকদের দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। সকল পূজা উদ্যোক্তারাই প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে এই শারদ উৎসবকে সার্থক করার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন রাজ্য পুলিশ মহা নির্দেশক অনুরাগ ধানকর। স্নেফার ডগ এবং বম স্কোয়ার্ডকে নিয়ে বিভিন্ন প্যান্ডেলে পর্যবেক্ষণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২রা অক্টোবর পর্যন্ত সন্ধ্যা ৫ টা থেকে রাত্র ১টা পর্যন্ত নো এন্ট্রি জোন থাকবে। নো এন্ট্রির পরেও যানজট এড়াতে কোন পাবলিক ভিহিকেলকে পুজো মণ্ডপ এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। নো এন্ট্রির পরে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত গাড়ি গুলিকেই যাতায়াতের অনুমতি দেওয়া হবে।
এদিকে রাজ্যজুড়ে চাঁদার জুলুম নিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছেন রাজ্য পুলিশ মহা নির্দেশক। তিনি জানান, চাঁদার কোন ধরনের জুলুমবাজি সহ্য করা হবে না। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে অবিলম্বে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে আহ্বান জানান তিনি। রাজ্য পুলিশ মহানির্দেশকের কথায়, চাঁদার জুলুমবাজির যে খবরগুলি পুলিশের কাছে এসেছে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের আটক করা হয়েছে। আবার কোথাও পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়েছে। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করবে পুলিশ বলে আশ্বস্ত করেছেন তিনি। ১১২ হেল্পলাইন নম্বর গোটা রাজ্যব্যাপী খোলা থাকবে। যেকোনো ধরনের আপৎকালীন পরিস্থিতিতে এই নাম্বারে যোগাযোগ করতে রাজ্যবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়াও শারদ উৎসবকে কেন্দ্র করে রেলের মাধ্যমে প্রচুর মানুষ রাজ্যের এই প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে যাতায়াত করবেন। ফলে রেলস্টেশনগুলিতেও বিশেষ নিরাপত্তায় মোতায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্য পুলিশ মহা নির্দেশক। রাত্রিকালীন বিভিন্ন ট্রেনে মহিলা সহ শিশুরা যাতে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারেন সে জন্য ট্রেন এবং রেল স্টেশনে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে, যাতে করে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকবে না। অপরদিকে বিএসএফের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে সীমান্ত এলাকাগুলিতেও কঠোর নিরাপত্তা বজায় রাখা হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্য পুলিশ মহা নির্দেশক অনুরাগ ধানকর।
সবমিলিয়ে শারদ উৎসব নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে প্রশাসন তৎপর রয়েছে বলেই এদিন জানালেন রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অনুরাগ ধানকর। শারদ উৎসব যেন নির্বিঘ্নে আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয় তার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।

