প্রখ্যাত গায়ক জুবিন গার্গের অকালপ্রয়াণ, বিভিন্ন মহলে শ্রদ্ধা ও শোকবার্তা

গুয়াহাটি / সিঙ্গাপুর, ১৯ সেপ্টেম্বর: আসামের কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী জুবিন গার্গ আর নেই। শুক্রবার সিঙ্গাপুরে স্কুবা ডাইভিংয়ের সময় এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫২ বছর।

‘ইয়া আলি’ খ্যাত এই গায়ক সিঙ্গাপুরে একটি স্কুবা ডাইভিং অ্যাক্টিভিটিতে অংশ নিচ্ছিলেন, তখনই তিনি জলে পড়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে উদ্ধার করে আইসিইউ-তে ভর্তি করা হয়, তবে শেষরক্ষা হয়নি। সূত্রে জানা গেছে, আজ সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিতব্য নর্থ ইস্ট ফেস্টিভ্যাল-এ তাঁর পারফর্ম করার কথা ছিল।

জুবিন গার্গের আকস্মিক মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সঙ্গীত জগতে। আসামের এক মন্ত্রী এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ শোকপ্রকাশ করে লেখেন, “জুবিন দার অকাল প্রয়াণে গভীরভাবে মর্মাহত। আসাম হারালো কেবল একজন সঙ্গীতশিল্পী নয়, বরং এক হৃদস্পন্দনকে। তিনি শুধু আসামের নয়, ভারতেরও গর্ব ছিলেন। তাঁর গানে ধরা পড়ত আমাদের সংস্কৃতি, আবেগ ও আত্মার প্রতিচ্ছবি।”

তিনি আরও লেখেন, “তাঁর সুরে একাধিক প্রজন্ম খুঁজে পেয়েছে আনন্দ, আশ্রয় এবং পরিচয়। এই শূন্যতা অপূরণীয়। তাঁর পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং অগণিত ভক্তদের প্রতি গভীর সমবেদনা। তাঁর আত্মা শান্তি লাভ করুক। ওম শান্তি।”

প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ রিপুন বরা এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ লেখেন, আমাদের সাংস্কৃতিক আইকন জুবিন গার্গের অকাল প্রয়াণে গভীরভাবে মর্মাহত ও শোকাহত। তাঁর কণ্ঠ, সঙ্গীত এবং অদম্য মনোভাব প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে। তাঁর পরিবার, ভক্ত ও প্রিয়জনদের প্রতি রইল গভীর সমবেদনা। শান্তিতে বিশ্রাম নাও, লিজেন্ড।”

অভিনেতা আদিল হুসেনও** গভীর শোকপ্রকাশ করে লেখেন, জুবিন গার্গের সিঙ্গাপুরে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু সংবাদে হতবাক ও বিধ্বস্ত আমি। অসমীয়া সঙ্গীত ও সংস্কৃতিতে তাঁর অবদান অতুলনীয়। তিনি আমাদের মধ্যেই বেঁচে থাকবেন তাঁর গানের মাধ্যমে। প্রিয় জুবিন, অনেক ভালোবাসা ও আবেগ নিয়ে তোমায় মনে রাখব। ঈশ্বর তোমার আত্মাকে শান্তিতে রাখুন। অন্যপারে দেখা হবে… সেখানেও তোমার সুরে দেবতাদের মন ভরিয়ে দিও।”

“আসামের কণ্ঠস্বর” হিসেবে পরিচিত জুবিন গার্গ জাতীয় খ্যাতি অর্জন করেন ২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত *গ্যাংস্টার’ ছবির কালজয়ী গান ‘ইয়া আলি’-র মাধ্যমে। পরে তিনি বলিউডে ‘দিল তু হি বাত্তা’ (কৃষ ৩), ‘জানে কেয়া চাহে মন’** (পেয়ার কে সাইড ইফেক্টস) এর মতো আরও অনেক হিট গান উপহার দেন।

জুবিন শুধুমাত্র হিন্দি বা অসমীয়া নয়, গান গেয়েছেন **বাংলা, নেপালি, ও আরও ৪০টিরও বেশি ভাষা ও উপভাষায়**, যার ফলে তাঁর একটি বিশাল ও বৈচিত্র্যময় ভক্তসমাজ গড়ে ওঠে।

জুবিন গার্গের জন্ম ১৯৭২ সালে মেঘালয়ের শিলংয়ে। তাঁর আসল নাম ছিল জুবিন বোরঠাকুর, তবে ৯০-এর দশকে তিনি নিজের গোত্র ‘গার্গ’ ব্যবহার করে নাম পরিবর্তন করেন। আসামে ৯০-এর দশকে জনপ্রিয়তা অর্জনের পর, ২০০৬ সালে বলিউড ছবির গ্যাংস্টার’-এর ইয়া আলি’ গানটি তাঁকে সারা দেশে খ্যাতি এনে দেয়। এরপর তিনি সুবহ সুবহ’, ‘ক্যা রাজ হ্যায়’ সহ একাধিক হিট গান উপহার দেন বলিউডে। তিনি আসামি, বাংলা ও হিন্দি ভাষার পাশাপাশি ৪০টিরও বেশি ভাষা ও উপভাষায় গান গেয়েছেন। বহু বছর ধরে তাঁকেই আসামের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে ধরা হত। জুবিন গার্গ কেবল একজন গায়কই ছিলেন না, ছিলেন একজন সুরকার, গীতিকার, অভিনেতা এবং সমাজকর্মী। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে একটি যুগের অবসান ঘটল।

জুবিন গার্গের অবদান ভারতের সঙ্গীত ও সংস্কৃতির ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর কণ্ঠে গাওয়া গানগুলি আজও কোটি মানুষের হৃদয়ে বাজে, এবং আগামী দিনেও বাজবে। তাঁর রেখে যাওয়া সৃষ্টির ভাণ্ডার তাঁকে অমর করে রাখবে।জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সঙ্গীতকে নিয়ে কাজ করে যাওয়া এই শিল্পীকে হারিয়ে ভারতীয় সঙ্গীতজগত হারাল এক অমূল্য রত্নকে।