ত্রিপাক্ষিক চুক্তির শর্ত জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি ‘আমরা বাঙালী’ দলের

আগরতলা, ১৯ সেপ্টেম্বর : ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের শরিক দল তিপরা মথা, রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রিপাক্ষিক চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলল আমরা বাঙালী দল। শুক্রবার এক বিবৃতিতে দলের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে, চুক্তির সমস্ত শর্ত জনসমক্ষে প্রকাশ করা হোক। কারণ এই চুক্তি নিয়ে জনমনে ব্যাপক আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

‘আমরা বাঙালী’ দলের অভিযোগ, তিপরা মথার পক্ষ থেকে একাধিকবার এই চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়েছে। অথচ চুক্তির প্রকৃত বিষয়বস্তু এখনও সাধারণ মানুষের কাছে অজানা। ফলে ভবিষ্যতে এই চুক্তির মাধ্যমে রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী বাঙালীদের চরম ক্ষতি হতে পারে, এমনই আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দলের দাবি, অতীতেও যেসব চুক্তি হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশই জনজাতিদের স্বার্থে তৈরি হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে বাম আমলে গৃহীত ত্রিপুরা জনজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদ(টিটিএএডিসি) আইন। ওই আইনের মাধ্যমে রাজ্যের ৩০ শতাংশ জনজাতির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৭০ শতাংশ ভূমি। অথচ ৭০ শতাংশ বাঙালীর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ৩০ শতাংশ জমি।

এছাড়াও দলের অভিযোগ, এই ৩০ শতাংশ জমিও উন্মুক্ত বাজারে কেনাবেচা হলেও, বাঙালীরা জনজাতি এলাকা থেকে জমি কিনতে পারেন না। ফলে ধীরে ধীরে বাঙালীদের হাত থেকেও ভূমি চলে যাচ্ছে। ‘আমরা বাঙালী’ দলের আরও অভিযোগ, বাঙালীদের দেওয়া কর, দৈহিক শ্রম ও বৌদ্ধিক শ্রমেই পার্বত্য ত্রিপুরা আজ সৌন্দর্যময় হয়েছে। অথচ সেই ভূমিপুত্র বাঙালীদেরকেই উদ্বাস্তু ও বিদেশি তকমা দিয়ে অসম্মানিত করা হয়েছে।

দলের নেতৃবৃন্দ বামফ্রন্ট সরকার, কংগ্রেস এবং বিজেপিকেও কড়া ভাষায় আক্রমণ করে বলেছেন, বামফ্রন্ট সরকার নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর আদর্শের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার জন্য বিজয় রাঙ্খল নামক এক বাঙালী হত্যাকারীর সঙ্গে চুক্তি করে তিনটি সাধারণ আসনকে জনজাতি সংরক্ষিত (এসটি) আসনে রূপান্তরিত করে বাঙালীদের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এখন যদি এই নতুন ত্রিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে আবারও বাঙালীদের স্বার্থবিরোধী কিছু করা হয়, তবে ‘আমরা বাঙালী’ দল তা কোনওভাবেই মেনে নেবে না।

এছাড়া দলটি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রসঙ্গ তুলে দাবি করেছে, যেহেতু আইনটির মেয়াদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত, তাই এখন অনুপ্রবেশকারী ইস্যুতে পুনরায় শোরগোল তোলা উচিত কিনা তা সরকারের বিবেচনার বিষয়। সবশেষে দীর্ঘদিন ধরে এডিসি এলাকায় বসবাসকারী বাঙালীদের উচ্ছেদের আশঙ্কা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ‘আমরা বাঙালী’ দল। তারা সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে, রাজ্যে যেন কোনওভাবেই শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট না হয়। সেদিকে সরকার ও প্রশাসনকে বিশেষ নজর দিতে হবে।