নেপালে সহিংস আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে কারফিউ জারি, রাষ্ট্রপতির সংলাপের আহ্বান

কাঠমান্ডু, ১০ সেপ্টেম্বর : নেপালে চলমান Gen Z নেতৃত্বাধীন সহিংস আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নেপালি সেনাবাহিনী আজ দেশজুড়ে কারফিউ এবং নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সেনাবাহিনীর জনসংযোগ ও তথ্য অধিদপ্তরের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আজ বিকেল ৫টা পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞামূলক আদেশ এবং এরপর আগামীকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত দেশব্যাপী কারফিউ বলবৎ থাকবে। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

সেনাবাহিনী জানায়, আন্দোলনের নামে কিছু “আইনবহির্ভূত ব্যক্তি ও গোষ্ঠী” সহিংস কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাঙচুর, সহিংস আক্রমণ এবং এমনকি ধর্ষণের চেষ্টা পর্যন্ত। এসব অপরাধ প্রতিরোধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার কথা জানিয়েছে সেনাবাহিনী। তারা সকল নাগরিককে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, শুধুমাত্র জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হবে এবং কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে নিরাপত্তা বাহিনীকে জানাতে হবে।

এদিকে, কাঠমান্ডু উপত্যকায় সেনাবাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতির ফলে আজ কিছুটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে এখনো উত্তেজনা বিরাজমান। বিক্ষোভের কারণে সোমবার বিকেল থেকে বন্ধ থাকা ট্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে। বিমানবন্দরের কার্যক্রম পুনরায় চালু হবে কিনা, তা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে।

কারফিউ চলাকালীন অ্যাম্বুলেন্স, দাহযান, দমকল, স্বাস্থ্যকর্মী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর যানবাহন চলাচল অব্যাহত থাকবে। জরুরি পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিকটস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, আন্দোলনের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রপতি রাম চন্দ্র পৌডেল প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন এবং এর পরপরই রাষ্ট্রপতি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংলাপে বসার আহ্বান জানান। রাষ্ট্রপতি বলেন, “রক্তপাত ও ধ্বংস নয়, বরং সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমেই সংকটের সমাধান সম্ভব।”

আন্দোলনটি শুরু হয় ৮ সেপ্টেম্বর, যখন সরকার কর রাজস্ব এবং সাইবার নিরাপত্তার অজুহাতে ফেসবুক, টিকটকসহ বেশ কয়েকটি প্রধান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিষিদ্ধ করে। আন্দোলনকারীরা এই নিষেধাজ্ঞাকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত হিসেবে দেখছেন। তাঁদের দাবি, সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে, দুর্নীতি ও পক্ষপাতিত্ব বন্ধ করতে হবে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে।

গত তিন দিনে পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতির দিকে গেছে। এখন পর্যন্ত অন্তত ১৯ জন নিহত এবং ৫০০ জনের বেশি আহত হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। সেনাবাহিনী ও রাষ্ট্রপতি উভয়ই জনগণের সহযোগিতা কামনা করেছেন এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সংযম ও সচেতনতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন।