কিয়েভে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের মন্ত্রিসভার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত, পাল্টা জবাবে রাশিয়ার তেল পাইপলাইনে ইউক্রেনের হামলা

কিয়েভ, ৭ সেপ্টেম্বর: ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নতুন মোড় নিল রবিবার, যখন রুশ বাহিনীর এক ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় কিয়েভের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মন্ত্রিসভার ভবনে আগুন ধরে যায় এবং অন্তত তিনজন নিহত হন, যাদের মধ্যে রয়েছে এক বছরের একটি শিশু। ইউক্রেন এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ দ্রুঝবা তেল পাইপলাইনে পাল্টা হামলা চালায়।

ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া সভিরিদেনকো বলেন, “এই প্রথমবার শত্রুপক্ষের হামলায় একটি সরকারি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হলো। ভবনগুলো আমরা পুনর্গঠন করব, কিন্তু যেসব প্রাণ গেছে, তারা আর ফিরে আসবে না।” তিনি পশ্চিমা মিত্রদের উদ্দেশে বলেন, কেবল কথায় নয়, রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের উপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান।

কিয়েভের পেচেরস্কি জেলায় অবস্থিত মন্ত্রিসভার ভবনের ছাদ ও ওপরের তলা থেকে প্রচণ্ড ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎসকো জানান, প্রথমে ড্রোন দিয়ে হামলা শুরু হয়, পরে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। এক বছরের শিশু, এক তরুণী ও এক বৃদ্ধা নিহত হন। আহতদের মধ্যে একজন গর্ভবতী নারী রয়েছেন।

কিয়েভের অন্যান্য এলাকা — যেমন স্ভিয়াতশিনস্কি ও ডারনিৎসকি —তেও হামলার ফলে ধ্বংসস্তুপ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বহু আবাসিক ভবন আংশিকভাবে ধসে পড়ে।

ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, ওই রাতে রাশিয়া ৮০৫টি ড্রোন ও ১৩টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। কিয়েভের সামরিক প্রশাসনের প্রধান তিমুর তকাচেঙ্কো রাশিয়াকে “বেসামরিক স্থাপনা টার্গেট করে হামলা চালানোর” অভিযোগ করেন এবং জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার আহ্বান জানান।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা একে “গুরুতর পরিস্থিতির অবনতি” বলে উল্লেখ করে বলেন, “সরকারি অফিসে সরাসরি হামলা যুদ্ধের ধরণ পাল্টে দিচ্ছে। আমাদের মিত্রদের এখনই শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা সরবরাহ করতে হবে।”

এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইউক্রেন রাশিয়ার শক্তি পরিকাঠামোর উপর পাল্টা হামলা চালায়। ইউক্রেনের ড্রোন কমান্ডার রবার্ট ব্রোভদি নিশ্চিত করেন যে, ব্রায়ানস্ক অঞ্চলে দ্রুঝবা তেল পাইপলাইনে “ব্যাপক অগ্নি-ক্ষয়ক্ষতি” হয়েছে। এই পাইপলাইন হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ায় তেল সরবরাহ করে — যারা এখনো রাশিয়ান তেল আমদানি করছে।

অন্য ইউক্রেনীয় শহরেও হামলা হয়েছে। ক্রেমেনচুকে কয়েক ডজন বিস্ফোরণে বিদ্যুৎকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে শহরের কিছু অংশে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বলে জানান মেয়র ভিতালি মালেতস্কি। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির শহর ক্রিভি রিহ-তেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পরিবহন ও অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওডেসায় আবাসিক ভবনে আগুন ধরে যায়।

রাশিয়া এখনো এই হামলার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি, তবে রুশ রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে যে তারা ৬৯টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ধ্বংস করেছে।

উভয় পক্ষই বেসামরিক নাগরিকদের টার্গেট করার অভিযোগ অস্বীকার করলেও, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

এদিকে ইউক্রেনে পশ্চিমাঞ্চলীয় আকাশসীমা হুমকির মুখে পড়ায় পোল্যান্ড তাদের নিজস্ব এবং মিত্রদের যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে, জানিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

এই হামলা যুদ্ধের ভয়াবহতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে, এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার জন্য চাপও ক্রমাগত বাড়ছে।