কলকাতা, ৫ সেপ্টেম্বর: তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ মমতা বালা ঠাকুরের নেতৃত্বাধীন অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি চিঠি দিয়ে দলের লোকসভা সাংসদ মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে। সাংসদ মহুয়া মৈত্র সম্প্রতি কৃষ্ণনগরে এক জনসভায় মতুয়া সম্প্রদায় নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
চিঠিতে মহাসঙ্ঘের তরফে জানানো হয়েছে, মহুয়া মৈত্রর মন্তব্যে মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে। তাঁরা চান, মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে মহুয়া মৈত্রকে প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করুন এবং তাঁর কাছ থেকে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার ব্যবস্থা করুন।
যদিও এই চিঠি সরাসরি মমতা বালা ঠাকুর নয়, বরং মহাসঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক সুখেশ চৌধুরীর পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছে। সম্প্রতি মহাসঙ্ঘ এক বিবৃতির মাধ্যমে মহুয়া মৈত্রর মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করে তাঁকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বলেন।
সুখেশ চৌধুরী বলেন, “আমরা আগেই সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে মহুয়া মৈত্রকে বার্তা দিয়েছিলাম যে তিনি যেন নিজের মন্তব্য প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। কিন্তু তিনি এখনও তা করেননি। তাই বাধ্য হয়েই আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিতভাবে হস্তক্ষেপের আর্জি জানিয়েছি। আমাদের বিশ্বাস, মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন।”
উল্লেখ্য, কৃষ্ণনগরে এক সভায় মহুয়া মৈত্র বলেন, “সারা বছর তৃণমূলের সঙ্গে থাকো, আর ভোটের সময় হয়ে গেলে আবার সনাতনী হিন্দু হয়ে যাও? কাজ চাইলে, রাস্তা চাইলে, ভাতার জন্য আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মনে পড়ে। তখন কাঠের বালা পরে এসো। তারপর আবার কী হয়?” তিনি আরও বলেন, “আমার এই বক্তব্য ভাইরাল হবে, আমি জানি। কিন্তু আমি কেয়ার করি না।”
মতুয়া সম্প্রদায় মূলত বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে পশ্চিমবঙ্গে আসা একটি পিছিয়ে পড়া হিন্দু জনগোষ্ঠী। এঁদের বসবাস মূলত নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে এই সম্প্রদায় বিজেপির প্রতি ঝুঁকেছে বলেই রাজনীতিতে চর্চা। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল যখন রাজ্যে ব্যাপক সাফল্য পায়, তখনও মতুয়া অধ্যুষিত বনগাঁ ও রানাঘাট কেন্দ্রে বিজেপি জয়লাভ করে।
এই প্রেক্ষিতে, মহুয়া মৈত্রর মন্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে নতুন করে বিতর্ক দানা বাঁধছে। এখন দেখার, মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেন।

