আগরতলা, ৪ সেপ্টেম্বর : করবুক মহকুমার লেবাছড়া তহশীলের অধীনে উচুই বাড়ির লেচুবাগান এলাকায় বুধবার সাত সকালে হঠাৎ করে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই এন এল এফ টি এবং এটি টি এফ নামধারী গোষ্ঠীর সদস্যরা কৃষি দফতরের জমি দখল করে ঘরবাড়ি বানানো শুরু করে। হঠাৎ করে সাত সকালে হুড়মুড় করে গাড়ীতে করে জিনিস পত্র এনে লিচুবাগান এলাকায় ঘরবাড়ি তৈরি করতে শুরু করলে স্থানীয় মানুষের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।পরে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ প্রশাসন জনজাতি মানুষের উগ্ৰ আচরণ লক্ষ্য করে আগেকার মতো নীরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। এরই তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে আমরা বাঙালি।
অথচ তারা দাবি করছে তারা নাকি আত্মসমর্পণকারী এন এল এফ টি ও এটি টি এফ গোষ্ঠীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি মোতাবেক সরকারের কাছে দাবি করে ছিল গত ২ মে গোমতী জেলা শাসকের নিকট লিখিত ভাবে আবেদন করে জানান তাদের প্রতিটি পরিবারকে ২৫ কানি করে বন দফতরের জমি দিতে হবে। এই বিষয়ে প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো রকম প্রতিশ্রুতি না পাওয়ায় তারা জোর করে সরকারী জমি দখল করতে চাইছে। অথচ যারা আজ বন দফতরের কৃষি জমি দখল করতে আসতে এসেছে তাদের চেহারা দেখে স্পষ্ট বুঝা যায় তারা কোনো উগ্ৰপন্থী দলের লোক হতে পারে না। হঠাৎ করে তিপ্রা মথার সুপ্রিমোর মধ্যস্থতায় কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে শত শত বৈরী আত্মসমর্পণের নাটক করছে। যে নাটক শুরু করে ছিল কমিউনিস্টরা ত্রিপুরার বুকে সেই নাটক লাল সাদা গেরুয়া সব আমলেই চলছে।আর সরকার তাদের জামাই আদর করে বরণ করে নিয়ে কোটি কোটি টাকা দিচ্ছে।
সরকারী প্রশাসনে চাকরি দিচ্ছে, কোয়ার্টার দিচ্ছে, রাজনৈতিক পদ দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর করমর্দন করছে। অথচ তাদের স্বার্থে বামেরা এ ডি সি গঠন করেছে, উপজাতি উন্নয়ন দফতর খোলা হয়েছে,দেশ বিদেশ থেকে বিভিন্ন প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা অনুদান হিসেবে আসছে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে এ ডি সি র বাজেট বহির্ভূত হাজার হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে। সংরক্ষণের ও ব্যাকলগের সুবিধা নিয়ে বরং বর্তমানে বাঙালী ছেলেমেয়েদের চাইতে চাকরি এরা বেশি পাচ্ছে। এত কিছু দেওয়ার পর ও তারা বার বার বলছে তারা কিছুই পায়নি বলে অভিযোগ করছে। শুধু তাই নয় ত্রিপুরার ৭০ শতাংশ ভূমি যেহেতু কমিউনিস্টরা বাঙালী কে মশা বানিয়ে মশার হাত থেকে উপজাতিদের রক্ষা কবচ হিসেবে এ ডি সি দিয়ে গেছেন যেখানে বাঙালীদের ভূমির অধিকার নেই।আজ এডিসির প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাঙালীরা নৃপেন চক্রবর্তীর কথায় অনুপ্রেরণায় যে আমি যদি উপজাতির ঘরে জন্ম নিতাম আমি ও উগ্ৰপন্ত্রী হতাম।তাই শান্তিময় ত্রিপুরার বুকে বামেরা ক্ষমতা দখলের দুই বছরের মাথায় শুরু হয় বাঙালী গণহত্যা।
পরবর্তী সময়ে মাণিক সরকারের আমলে আবার শুরু হয় গণহত্যার পাশাপাশি অপহরণ বাণিজ্য। পার্টির দালালদের মাধ্যমে উগ্ৰপন্থীরা কোটি কোটি টাকা আদায় করে নিয়েছে।যার পরিণতিতে বাঙালীদের পরিশ্রমে গড়ে উঠা জম্পউইজলা বাজার,গাবরদী বাজারের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাজারের দোকানদার ও বাঙালীরা নিজের জীবন বাঁচাতে শহরাঞ্চলে চলে আসে।আর এই বাঙালী খুনীদের বাম আমলে যেমন আত্মসমর্পণের নাটক করে যেমন সকল সুযোগ সুবিধা হাতিয়ে নিয়েছে। তেমনি মান্দাই গণহত্যার নায়ক বিজয় রাঙ্খলের সঙ্গে চুক্তি করে কংগ্রেস নেতারা কুর্সীতে বসার জন্য কোটি কোটি টাকা দিয়ে ও তিনটি জেনারেল সিঁটকে এস টি রিজার্ভ করে দেয়।আর বর্তমান সরকারের আমলে দেখছি যে রনজিৎ দেব্বর্মার নাম শুনলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাঙালীদের ভয়ে প্রস্রাব পায়খানা ধরে যেত তিনি এখন কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতরের মন্ত্রীর সঙ্গে করমর্দন করে।এই যখন অবস্থা তখন উগ্ৰপন্ত্রী সাজিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করতে এই নাটক চলতেই থাকবে।কারণ এই দেশে স্বাধীনতার জন্য যে জাতি বেশি আত্মবলিদান দিয়েছে সেই জাতির লোকেরা যাতে মাথা উঁচু করে শান্তিতে না থাকতে পারে সেই চক্রান্ত দীর্ঘ দিনের।তাই দেখা যাচ্ছে আশি সালের গণহত্যার বলি হয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে ত্রিপুরা সরকারের বনাঞ্চলে দীর্ঘ দশক ধরে বাস করছে বর্তমানে এডিসি প্রশাসন এই সকল ভূমি জনজাতি মানুষদের পাট্টা দিয়ে প্রশাসনের সহায়তায় জোর করে বাঙালী পরিবার গুলোকে উচ্ছেদ করে দিচ্ছে সরকারের নীরবতায়।
ধলাই জেলার ডুলুবাড়িতে বসবাস রত কতগুলো বাঙালী পরিবার কে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও সঠিক বিচার পাচ্ছে না। শুধু এখানেই নয় বর্তমান সময়ে প্রশস্ত সড়ক করার জন্য অনেকের জমি পড়েছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো এ ডিসি এলাকায় যে সমস্ত জমিতে দীর্ঘ দশক ধরে বাঙালীরা কৃষি কাজ করে আসছে সে সমস্ত জমি রাস্তা প্রশস্ত করার কারণে সরকার অধিগ্ৰহণ করলে যেহেতু এডিসি এলাকার জমির মালিক জনজাতিরা তাই ঐ সমস্ত জমির বরাদ্দকৃত টাকা হাতিয়ে নিতে চাইছে।সব গুলো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসার জন্য ও ধরে রাখার জন্য মাত্রাতিরিক্ত উপজাতি তোষণ নীতির কারণে তারা একদিকে যেমন সরকারি জমি দখল করে নিচ্ছে তেমনি কোটি কোটি টাকা আত্মসমর্পণের নাটক করে বাগিয়ে নিচ্ছে। সরকারের প্রশাসন তাদের কাছে নতজানু সব আমলেই।তাই ত্রিপুরার বুকে দীর্ঘ দশক ধরে উগ্ৰপন্থী তৎপরতা চললেও উগ্ৰপন্থী ধরা পড়েনি।আর এই সকল উগ্ৰপন্থীদের আক্রমণের শিকার হয়ে যে সকল পরিবারের লোকেরা কেউ বাবা হারিয়েছে,কেউ মা হারিয়েছে,কেউ আদরের সন্তান হারিয়েছে কেউ নিজের চোখের সামনে নিজের মা কে বোনকে ধর্ষণ করতে দেখেছে। সেই সকল পরিবারের লোকেরা একরাশ ব্যাথা নিয়ে নিঃস্ব হয়ে সরকারী সাহায্য না পেয়ে শহরাঞ্চলে আশ্রয় নিয়ে নূতন করে বাঁচার আশায় মহিলারা বাড়ি ঘরের কাজ করছে আর পুরুষ লোকেরা ডেইলি লেবারী বা ফুটপাতে দোকান দারী করছে।আর তাদের খুনীরা সরকারের কোটি কোটি টাকা পেয়ে শহরাঞ্চলে জমি কিনে তাদের সামনে দিয়ে বুক ফুলিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। আমরা বাঙালী দল মনে করে এই ভাবে প্রশাসনের নীরবতায় শুধু ভোটের রাজনীতি করতে গিয়ে জাতি উপজাতির মধ্যে যে বিভেদের প্রাচীর গড়ে তোলা হচ্ছে তাতে সঠিক শান্তি আসবে না। আমরা বাঙালী দল মনে করে প্রত্যেকটি মানুষের বাঁচার জন্য অন্ন বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা ও চিকিৎসার গ্যারান্টি প্রয়োজন। তাই এই ভাবে এক শ্রেণীর মানুষ যাদের নিজস্ব জমি আছে বাড়িঘর আছে তারা প্রশাসনের দুর্বলতা কে কাজে লাগিয়ে উগ্ৰপন্থী খাতায় নাম লিখিয়ে সরকারি জমি আত্মসাৎ করে নেবে তা মেনে নেওয়া যায় না।
বরং যে সকল পরিবারের জমি নেই জাতি উপজাতির মধ্যে তাদের কে বাঁচার জন্য সরকারি জমি দিলে তারা বাঁচার জন্য কৃষি কাজ করবে এতে তারা যেমন উপকৃত হবে তেমনি তারা স্বচ্ছল হলে রাজ্যবাসী উপকৃত হবে। তাই আমরা বাঙালী দল মনে করে এই ভাবে অর্থ না দিয়ে ব্লক ভিত্তিক পরিকল্পনার মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে তুললেই জাতি জনজাতির মধ্যে বিভেদের প্রাচীর দূর হবে।

