আগরতলা, ৩ সেপ্টেম্বর : কর্মসংস্থান নিয়ে ছেলেখেলায় মত্ত সরকার। আধা সামরিক বাহিনীর শারীরিক পরীক্ষা আগরতলার আসাম রাইফেলস গ্রাউন্ড বা দমদমিয়ার পরিবর্তে মিজোরামের করা হয়েছে। তাতে আর্থিক দিক থেকে দুর্বল প্রায় সকল প্রার্থীদের উপর যেমন আর্থিক বোঝার চাপ বাড়ে। তাই মিজোরাম থেকে সরিয়ে এনে আগরতলায় অতিসত্বর স্থানান্তরিত করার দাবিতে সরকারের নিকট আবেদন জানিয়েছে ত্রিপুরা প্রদেশ যুব কংগ্রেস। তাঁদের দাবি পূরণ না হলে আগামীদিনে বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হবেন, বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ত্রিপুরা প্রদেশ যুব কংগ্রেসের সভাপতি নীলকমল সাহা বলেন, বিজেপির ডাবল ইঞ্জিন সরকারের শাসনের ফলে যখন বেকারত্বের তীব্রতা ক্রমবর্ধমান, চাকুরীর সুযোগ নেই বললেই চলে। কর্মসংস্থান নিয়ে ছেলেখেলায় মত্ত সরকার। সে সময় কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামান্য চাকরিরও যে সুযোগগুলি আসছে সে নিয়েও আমাদের রাজ্যে যে নৈরাজ্য চলছে তারই একটি উদাহরণ কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের আধা সামরিক বাহিনীতে কিছু কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতি বছরই রাজ্যে রাজ্যে নিয়োগ রেলি করা হতো।
এদিন তিনি বলেন, বিগত দিনগুলিতে এ রাজ্যেও তা হতো। লিখিত পরীক্ষা, শারীরিক দক্ষতা, মেডিকেল, এসবই রাজ্যে অনুষ্ঠিত হতো এবছর কোন এক অজ্ঞাত কারণে শারীরিক পরীক্ষার স্থান রাজ্যের আগরতলার আসাম রাইফেলস গ্রাউন্ড বা দমদমিয়ার পরিবর্তে মিজোরামের আইজল শহর থেকে অনেকটা দূরে জৌহাসাং এর দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় করা হয়। এই চাকুরিগুলির ক্ষেত্রে প্রতিটি রাজ্যেরই একটা নির্দিষ্ট কৌটা থাকে। সে অনুযায়ী আমাদের রাজ্যের আবেদনকারীদের লিখিত পরীক্ষা স্টাফ সিলেকশন কমিশনের মাধ্যমে এই বছরে ৪ঠা ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। জুন মাসের ২৪ তারিখ ফলাফল ঘোষিত হয়। এতে দেখা যায় ২০০০ মেয়ে সহ মোট ৮০০০ হাজার পরীক্ষার্থী যোগ্যতামান অর্জন করে। কর্তৃপক্ষ কোনরকম নোটিফিকেশন জারি না করে ফল প্রকাশের কিছু দিনের মধ্যেই শারীরিক পরীক্ষার জন্য এডমিট কার্ড, কোথায় এবং কবে পরীক্ষা হবে তা জানিয়ে দেয়। ২০শে আগস্ট থেকে ছেলে ও মেয়েদের ২৮ আগস্ট থেকে পরীক্ষার সূচি জানিয়ে দেওয়া হয়। এতে প্রার্থীদের কোনরকম মানসিক প্রস্তুতি নেয়ার ও সুযোগ ছিল না কারণ বরাবরই এই পরীক্ষাগুলি উপরে উল্লেখিত স্থানেই অনুষ্ঠিত হতো। এর ফলে রাজ্যের আর্থিক দিক থেকে দুর্বল প্রায় সকল প্রার্থীদের উপর যেমন আর্থিক বোঝার চাপ বাড়ে অন্যদিকে মিজোরামের যাতায়াতের অপ্রতুল ব্যবস্থা, তারপরও আইজল থেকে জৌহাসাং এর দূরত্ব এবং রাস্তা না থাকার ফলে পরিবহণের ক্ষেত্রে সাধারণ সময়ের থেকে পাঁচ গুণ ভাড়া বৃদ্ধি, থাকার জায়গারও প্রভাব হোটেলে ও রাত পিছু সাধারণ সময়ের তুলনায় চার পাঁচ গুণ ভাড়া বৃদ্ধি সহ একই হাল খাওয়ার খরচেও। ফলে বাধ্য হয়ে ছেলেদের অনেককেই রাস্তায় রাত কাটাতে হয়েছে তাতে করে পরীক্ষার পূর্বেই অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। উঁচু পাহাড় ও পাথর কাদা মাটিতে দৌড়াতে গিয়ে অনেকেই হাত-পা ভেঙ্গে ও অজ্ঞান হয়ে পড়ার ফলে পরীক্ষা সম্পন্ন না করেই রাজ্যে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে। এর দায়ভার অমিত শাহ’ র স্বরাষ্ট্র দপ্তর বা রাজ্য সরকার এড়াতে পারে না।
ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আগেও জোর জোরালো দাবি করা হয়েছিল যাতে নতুন নোটিফিকেশন জারি করে মেয়েদের শারীরিক পরীক্ষা মিজোরাম থেকে সরিয়ে এনে আগরতলায় করার জন্য এবং মিজোরামে অসুস্থ হয়ে পড়া আহত সকল কর্মপ্রার্থী ছেলেদের সকলকে সরকারি খরচে সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত সহ তাদের এবং অন্য সকল ছেলে পরীক্ষার্থীদের সরকারি উদ্যোগে ও খরচে রাজ্যে ফিরিয়ে এনে পুনরায় শারীরিক পরীক্ষার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
তাঁর কথায়, মেয়েদের শারীরিক পরীক্ষা মিজোরাম থেকে সরিয়ে এনে আগরতলায় অতিসত্বর স্থানান্তরিত করে জানিয়ে দেওয়া হয়। এবং মিজোরামে অসুস্থ হয়ে পড়া আহত সকল ছেলেদের রাজ্যে ফিরিয়ে এনে তাদেরকে এই রাজ্যে পরীক্ষার দেওয়ার ব্যবস্থা ও সুযোগ করে দেওয়া হোক। না হলে ত্রিপুরা প্রদেশ যুব কংগ্রেস সরকারের এই অমানবিক ও অনৈতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার জন্য বাধ্য হবে।

