“ভারত-চীন সম্পর্ক গড়ে উঠুক পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে” — প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

তিয়ানজিন, ৩১ আগস্ট : চীনের তিয়ানজিন শহরে অনুষ্ঠিত সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা সম্মেলনের ফাঁকে রোববার গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মুখোমুখি হলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই বৈঠকে দু’দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি, পারস্পরিক সহযোগিতার বার্তা দিলেন দুই নেতা।

প্রধানমন্ত্রী মোদি বৈঠকে বলেন, “ভারত ও চীনের ২.৮ বিলিয়ন মানুষের স্বার্থ আমাদের সহযোগিতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমাদের সম্পর্কের অগ্রগতি সমগ্র মানবজাতির কল্যাণে সহায়ক হতে পারে।”

তিনি আরও জানান, “আমরা পারস্পরিক আস্থা, শ্রদ্ধা এবং সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে আমাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মোদি বলেছেন, ভারত ও চীন উভয়েই কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের পথে এগোচ্ছে এবং তৃতীয় কোনো দেশের দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের সম্পর্ককে মূল্যায়ন করা অনুচিত।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বৈঠকে বলেন, “ভারত চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু। আমাদের উচিত দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে পরিচালিত করা।”

তিনি আরও বলেন, “সীমান্ত সমস্যা যেন ভারত-চীন সম্পর্ককে সংজ্ঞায়িত না করে। আমরা একে অপরকে প্রতিপক্ষ নয়, সহযোগী হিসেবে দেখলে সম্পর্ক আরও সম্ভাবনাময়, স্থিতিশীল ও সুদূরপ্রসারী হতে পারে।”

শি জিনপিং বিশ্ব রাজনীতির অস্থিরতা ও পরিবর্তনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “আমরা দুটি প্রাচীন সভ্যতা, বিশ্বের দুই সর্বাধিক জনবহুল দেশ এবং গ্লোবাল সাউথ-এর পুরনো সদস্য। এই পরিস্থিতিতে আমাদের বন্ধু, প্রতিবেশী ও সহযোগী হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

সাত বছর পর চীনের মাটিতে পা রাখলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। তাঁর শেষ চীন সফর ছিল ২০১৮ সালের উহান সম্মেলনে, ডোকলামের পর। ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষের পর দুই দেশের সম্পর্ক সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছিল। সেই অবস্থা থেকে এখন কিছুটা উত্তরণ ঘটেছে। গত বছর ব্রিকস সম্মেলনে দুই নেতা সাক্ষাৎ করলেও এটি প্রথম পূর্ণাঙ্গ বৈঠক।

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের রপ্তানি পণ্যের উপর ৫০% শুল্ক আরোপ করেছেন, যা দিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্কে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। অপরদিকে, চীন এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে এবং “ভারতের পাশে দৃঢ়ভাবে থাকার” বার্তা দিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের দূরত্ব তৈরি হওয়ায় বেইজিংয়ের সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক মেরামতের নতুন প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ বহু বছরের মার্কিন কৌশলকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে, যেখানে ভারত ছিল চীনের পাল্টা একটি ভরসাযোগ্য কৌশলগত শক্তি।

সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও বৈঠকে বসবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। রাশিয়ান তেল আমদানি বন্ধে ভারতের অস্বীকৃতির পর যুক্তরাষ্ট্র ভারতের উপর দ্বিগুণ শুল্ক আরোপ করে। সেই প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হওয়ার ইঙ্গিত স্পষ্ট।

বৈঠকটি শুধুই কূটনৈতিক সৌজন্য বিনিময় নয়, বরং দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার দুই মহাশক্তির পারস্পরিক আস্থা পুনর্গঠনের প্রয়াস। এশীয় ভূরাজনীতিতে মোদি-শি বৈঠক হতে পারে এক নতুন যুগের সূচনা।