আহমেদাবাদ, ৩০ আগস্ট : গুজরাটের কংগ্রেস সভাপতি অমিত চাভড়া শনিবার বিজেপির বিরুদ্ধে ‘ভোট চুরি’ বা ভোট চুরির বড় ধরনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, রাজ্যে ভোটার তালিকা নিয়ে ব্যাপক জালিয়াতি চলছে এবং হাজার হাজার ভুয়া ও ডুপ্লিকেট এন্ট্রি পাওয়া গেছে।
অমিত চাভড়া বলেন, ‘‘কংগ্রেসের দলীয় সদস্যরা ভোটার তালিকার পর্যালোচনা করে দেখেছেন যে গুজরাটের অনেক এলাকায় একাধিক ভোটারের নাম একাধিকবার তালিকাভুক্ত হয়েছে।’’ তিনি বিশেষ করে নৌসারি লোকসভা কেন্দ্রের নাম উল্লেখ করেন, যেখানে গুজরাট বিজেপি সভাপতি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সি.আর. প্যাটিল নির্বাচিত।
চাভড়া বলেন, কংগ্রেসের দলীয় পর্যালোচনায় নৌসারি কেন্দ্রের চরিয়াসি বিধানসভা এলাকায় ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়েছে। মোট ৬,০৯,৫৯২ নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটার তালিকা পরীক্ষা করার পর ৩০,০০০ ভোটারকে “ডুপ্লিকেট, ভুয়া বা সন্দেহজনক” বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। চাভড়া দাবি করেছেন, ‘‘একটি কেন্দ্রেই যদি এতো বড় ধরনের ভোট চুরি হয়, তাহলে গোটা রাজ্যে গণতন্ত্র কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তা ভাবুন।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এ ধরনের অনিয়মের কারণে সি.আর. প্যাটিলের আগের নির্বাচনী জয় নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।’’ কংগ্রেসের তদন্তে দেখা গেছে, একাধিক ভোটারের নাম একাধিকবার তালিকাভুক্ত হয়েছে, কখনও ছোট বানান ভুল দিয়ে আবার কখনও একাধিক ভোটার আইডি ব্যবহার করে।
অমিত চাভড়া আরো অভিযোগ করেন, কিছু ক্ষেত্রে ঠিকানা পরিবর্তন করে ভোটার তালিকায় বাড়তি নাম যুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এটি কোনো সাধারণ ত্রুটি নয়, এটি গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য একটি সাজানো ষড়যন্ত্র।’’ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, গুজরাটের ভোটার তালিকায় এই ধরনের কার্যকলাপ দিনের পর দিন চলছে এবং এটি মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার একটি চেষ্টা।
যদিও কংগ্রেসের এই গুরুতর অভিযোগের পর বিজেপির পক্ষ থেকে এখনও কোনো সুষ্ঠু প্রতিক্রিয়া আসেনি। কংগ্রেস দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, গুজরাটের ভোটার তালিকা নিয়ে সরকারের হস্তক্ষেপের বিষয়টি অনেক আগে থেকেই আলোচনায় ছিল। কংগ্রেস জানায়, তারা এই ধরনের ভোট চুরি বা তালিকা ম্যানিপুলেশন ঠেকাতে পরবর্তী সময়ে আরো তদন্ত করবে এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন থেকে পূর্ণাঙ্গ যাচাইয়ের দাবি জানাবে।
অমিত চাভড়ার অভিযোগের পর, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বর্তমানে বিহারে তাঁর ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিহারে নির্বাচনী তালিকা নিয়ে বিশাল বিতর্কের পর, রাহুল গান্ধী ১৭ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এই যাত্রার মাধ্যমে মানুষের ভোটাধিকার রক্ষা করার দাবি তুলেছেন। কংগ্রেসের মতে, সারা দেশে ভোটার তালিকার পুনরায় সংশোধনের সময়ে বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে বিশেষ উদ্দেশ্য প্রণোদিত জালিয়াতির কাজ চলছে।
রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘‘আমি প্রতিদিন প্রধানমন্ত্রীকে ভোট চুরির অভিযোগ করছি, কিন্তু তিনি একেবারেই নিশ্চুপ কেন? কারণ তিনি ধরা পড়েছেন, তিনি উন্মুক্ত হয়েছেন। বিহারে ভোটার অধিকার যাত্রার প্রতি জনগণের সাড়া প্রধানমন্ত্রীকে শেকলবদ্ধ করেছে।’’
রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তাদের এই যাত্রা শুধু বিহারে নয়, পুরো ভারতের নির্বাচনী সিস্টেমে আস্থাহীনতা তৈরি করেছে। গত সপ্তাহে কংগ্রেস নেতা কেসি বেণুগোপাল বিহারের নির্বাচন কমিশনের প্রক্রিয়াকে ‘‘গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর’’ বলে অভিহিত করেছেন।
এদিকে, বিজেপি ও নির্বাচন কমিশন কংগ্রেসের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। নির্বাচন কমিশনের প্রধান কংগ্রেস নেতাকে জানিয়েছেন যে, তিনি যদি এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে না পারেন, তবে তাকে ক্ষমা চাইতে হবে অথবা লিখিত বিবৃতি দিয়ে তার অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ দেখাতে হবে, যা নির্বাচন বিধির অধীনে প্রয়োজনীয়।
এখন, গুজরাটের ভোটার তালিকা নিয়ে এই বিতর্ক ও কংগ্রেসের অভিযুক্ত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য নির্বাচন কমিশন কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জোর আলোচনা চলছে।

