নয়াদিল্লি, ২৩ অগাস্ট : ২৩ আগস্ট ২০২৫, দেশজুড়ে উদ্যাপিত হয়েছে দ্বিতীয় জাতীয় মহাকাশ দিবস, যা ভারতের মহাকাশ অভিযানের এক ঐতিহাসিক সাফল্য—চন্দ্রযান-৩ মিশনের সফট ল্যান্ডিং—এর স্মরণে প্রতি বছর এই দিন পালিত হয়। ২০২৩ সালের এই দিনে, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে অবতরণ করে ভারতের বিক্রম ল্যান্ডার, এরপর প্রজ্ঞান রোভার চাঁদের পৃষ্ঠে অভিযান শুরু করে। এই অসামান্য সাফল্যের মাধ্যমে ভারত বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদে সফট ল্যান্ডিং করে এবং প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে পৌঁছায়। এটি ভারতের বৈজ্ঞানিক সক্ষমতার এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে চিহ্নিত হয়, এবং সেই উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২৩ আগস্ট দিনটিকে “জাতীয় মহাকাশ দিবস” হিসেবে ঘোষণা করেন। ঐতিহাসিক সেই ল্যান্ডিং স্থানটির নাম দেওয়া হয় ‘শিব শক্তি পয়েন্ট’, যা আজ ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
২০২৫ সালের মহাকাশ দিবসের থিম—“ আর্যভট্ট টু গগনযান: এনসিয়েন্ট উইজডম টু ইনফাইনাইট পসিবিলিটিজ”—ভারতের প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞান ও আধুনিক মহাকাশবিজ্ঞানের মধ্যে এক অসাধারণ সেতুবন্ধন তৈরি করে। এটি আর্যভট্টের মতো প্রাচীন জ্ঞানীর সময় থেকে শুরু করে আজকের গগনযান মিশনের মাধ্যমে মানব মহাকাশ অভিযানের পথে ভারতের অগ্রগতিকে চিহ্নিত করে। এ উপলক্ষে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা গতকাল নয়াদিল্লিতে আয়োজন করে ন্যাশনাল স্পেস মিট 2.0, যেখানে বিভিন্ন মন্ত্রক, রাজ্য সরকার, গবেষণা সংস্থা, স্টার্টআপ এবং বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণে ভারতের আগামী দশকের মহাকাশ ব্যবহারের রোডম্যাপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এই বৈঠকে দশটি আলাদা সেশনে শতাধিক বিশেষজ্ঞ অংশ নেন, যাঁরা বিগত চার মাস ধরে নানা মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে মিলে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারিক দৃষ্টান্ত চিহ্নিত করেন।
সমাপনী সেশনে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব পি. কে. মিশ্র বলেন, “মহাকাশ অন্বেষণ মানে কেবলমাত্র নক্ষত্র ছোঁয়া নয়, এটি মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনার একটি উপায়। আজ ভারত তার মহাকাশ নীতির পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত বিপ্লবের মধ্যে প্রবেশ করেছে। ২০১৪ সালে যেখানে দেশের স্পেস স্টার্টআপ ছিল মাত্র ২টি, বর্তমানে তা ৩৫০ ছাড়িয়েছে।” কৃষি, স্বাস্থ্য, দুর্যোগ মোকাবিলা, জলবায়ু পরিবর্তন—প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে মহাকাশ প্রযুক্তি দেশের বাস্তব উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ইসরো চেয়ারম্যান ভি. নারায়ণন এই সভায় বলেন, “১৯৬৩ সালে থুম্বা থেকে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, আজ তা পৌঁছেছে বিশ্বের নেতৃত্বস্থানে। মহাকাশ খাতে বেসরকারি অংশগ্রহণ ও প্রযুক্তিগত ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ‘বিকসিত ভারত ২০৪৭’ লক্ষ্য পূরণে তা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।”
জাতীয় মহাকাশ দিবস উপলক্ষে সারা দেশে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। স্কুল, কলেজ, গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে মহাকাশ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলিতে প্রদর্শনী, ওয়ার্কশপ এবং শিক্ষামূলক কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে, যাতে যুব সমাজের মধ্যে মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহ ও কৌতূহল তৈরি হয়।ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি (পিআরএল)-এর আহমেদাবাদ, উদয়পুর ও মাউন্ট আবু ক্যাম্পাসেও বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটি উদ্যাপন করা হচ্ছে।
এই উপলক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ‘এক্স’-এ একটি বার্তা দিয়ে লেখেন, “চন্দ্রযান-৩-এর ঐতিহাসিক ল্যান্ডিং স্মরণে, জাতীয় মহাকাশ দিবসে প্রতিটি ভারতীয় গর্ব অনুভব করছে। আমি ইসরো-র বিজ্ঞানীদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই, যাঁদের কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার ফলেই এই কৃতিত্ব সম্ভব হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “মোদীজির নেতৃত্বে ভারত নতুন মহাকাশ সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করেছে এবং আমাদের যুব সমাজের মধ্যে উদ্ভাবনী শক্তির পুনর্জাগরণ ঘটেছে। চন্দ্রযান-৩ থেকে আদিত্য মিশন, এবং ভবিষ্যতের অভিযানগুলি ইসরো ভারতীয় আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে পরিণত করছে—অদম্য জেদ, প্রতিভা এবং অগাধ জাতীয় গর্ব নিয়ে।”
জাতীয় মহাকাশ দিবস কেবল অতীতের কীর্তির স্মরণ নয়, এটি ভবিষ্যতের এক বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রযুক্তিনির্ভর ভারতের দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রতিশ্রুতি। প্রাচীন জ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির মেলবন্ধনে, ভারত তার মহাকাশ অন্বেষণের যাত্রায় আজ বিশ্বসভায় এক দৃঢ় অবস্থান তৈরি করেছে—আর এই যাত্রার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ভারতের বিজ্ঞানী, গবেষক ও উদীয়মান তরুণ প্রজন্ম।

