নয়াদিল্লি, ২৩ আগস্ট: রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করার জন্য ভারতের ওপর অতিরিক্ত ট্যারিফ চাপানোর সিদ্ধান্তের পেছনে কোনো পূর্ব আলোচনা বা যোগাযোগ ছিল না বলে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। শনিবার ইকোনমিক টাইমস ওয়ার্ল্ড লিডার্স ফোরাম ২০২৫-এ বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি স্পষ্ট জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তের আগে ভারতের সঙ্গে রুশ তেল কেনা নিয়ে কোনো ধরনের কথা হয়নি। ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি ভারতের পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ ট্যারিফ আরোপ করেছে এবং রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানির কারণে আরও অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ ট্যারিফ চাপানো হয়েছে। এই ঘটনাকে একটি একতরফা ও জনসমক্ষে প্রকাশিত সিদ্ধান্ত বলে ব্যাখ্যা করেছেন জয়শঙ্কর।
তিনি বলেন, “আমরা আগে কখনো এমন কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট দেখিনি যিনি এতটা প্রকাশ্যভাবে নিজের বিদেশনীতি ও ঘরোয়া নীতিকে পরিচালনা করেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই ধরনের প্রকাশ্য ও একপাক্ষিক কূটনীতিক পদক্ষেপ গোটা বিশ্বের কাছেই নতুন এবং অস্বস্তিকর এক বাস্তবতা তৈরি করছে।” জয়শঙ্করের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন প্রায়শই কোনো আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্তের প্রথম ঘোষণা জনসমক্ষে করে থাকে, সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে পরে আলোচনা হয় — এটি সাধারণ কূটনৈতিক প্রথা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যুতি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “যে বিষয়গুলো আগে গোপনীয় আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত হতো, এখন তা প্রেস কনফারেন্স বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রথমবার প্রকাশ পাচ্ছে, এবং পরে দেশগুলিকে জানানো হচ্ছে। এটা শুধু ভারতের জন্য নয়, বরং গোটা বিশ্বেই কূটনৈতিক যোগাযোগের এক নতুন জটিলতা সৃষ্টি করছে।”
জয়শঙ্কর বলেন, ট্রাম্পের এই ধরনের ট্যারিফ কৌশল একেবারে নতুন, যেখানে শুধু বাণিজ্য নয়, অ-বাণিজ্যিক বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করতেও আমদানি শুল্ক ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, “এই পরিস্থিতিতে আমাদের কিছু রেড লাইন রয়েছে—যেমন কৃষক, ক্ষুদ্র উৎপাদকদের স্বার্থ এবং জাতীয় স্বার্থ—যা আমাদের রক্ষা করতেই হবে।” রাশিয়া থেকে তেল আমদানির ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারতের বিরুদ্ধে যে চাপ তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে জয়শঙ্কর প্রশ্ন তোলেন যে, কেন একই যুক্তি চীন বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, “বিশ্বের বৃহত্তম তেল আমদানিকারক চীন এবং বৃহত্তম এলএনজি আমদানিকারক ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রেই যদি এই যুক্তিগুলি কার্যকর না হয়, তাহলে ভারতের বিরুদ্ধে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণে পক্ষপাতের গন্ধ পাওয়া যায়।”
জয়শঙ্করের বক্তব্য স্পষ্ট করে দেয় যে, বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নতুন ধরণের জটিলতায় পড়েছে, যেখানে প্রচলিত নিয়মনীতি এবং আলোচনার রীতি উপেক্ষিত হচ্ছে। তিনি বলেন, এই নতুন বাস্তবতা ভারতের মতো দেশের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ, তবে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট—জাতীয় স্বার্থ ও নীতিগত অবস্থানে কোনো রকম আপস করা হবে না।

