স্থানীয় পণ্য কিনুন, অর্থনীতিকে মজবুত করুন, স্বাধীনতা দিবসে আহ্বান অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রীর

ইটানগর, ১৫ আগস্ট : অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু শুক্রবার ৭৯তম স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন উপলক্ষে ইটানগরের ইন্দিরা গান্ধী পার্কে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে রাজ্যের জনগণকে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য কেনার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর মতে, এভাবেই দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চলুন আমরা আমাদের কৃষক, শিল্পী ও উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়াই। প্রতিটি স্বদেশী পছন্দ আমাদের অর্থনীতি ও আমাদের মানুষকে শক্তি জোগায়। তিনি জানান, বর্তমানে ভারত বিশ্বে চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি এবং দ্রুত গতিতে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দিকে এগিয়ে চলেছে।

আজ ভারতের নেতৃত্ব বিশ্বমঞ্চে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। গ্লোবাল সাউথের নেতৃস্থানীয় কণ্ঠস্বর হিসেবে, আমরা সেই আস্থা থেকে শক্তি পাই যা বিশ্ব আমাদের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের উপর রাখে। আজ ভারতের কণ্ঠ আর সীমাবদ্ধ নয়, এটি বিশ্বমঞ্চে প্রতিপাদিত হচ্ছে, বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

সাথে তিনি যোগ করেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং ‘অপারেশন মহাদেব’-এর সাফল্য ভারতের ঐক্যবদ্ধ মনোবলের প্রতিফলন। প্রত্যেক জীবন মূল্যবান এবং সরকার প্রত্যেক ভারতীয় ও দেশের সীমান্ত রক্ষায় বদ্ধপরিকর। গান্ধীর ভূমিতে সন্ত্রাসের কোনও স্থান নেই। নিরীহ নাগরিকদের উপর কাপুরুষোচিত হামলার মুখে ভারত কখনও নীরব থাকবে না।

অরুণাচল প্রদেশের ভূমিকা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভারতের বিশ্ব নেতৃত্বের অভিযাত্রায় অরুণাচলের একটি পবিত্র ও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এটি শুধু উন্নয়নের সময় নয়, বরং আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্য, ভাষা, সংস্কৃতি ও হস্তশিল্প সংরক্ষণ ও প্রচারের একটি ডাকে পরিণত হয়েছে।

এ বছর অরুণাচল বিধানসভার সোনালী জয়ন্তী উদ্‌যাপন হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এটি শুধু ৫০ বছরের উদ্‌যাপন নয়, বরং আমাদের গণতান্ত্রিক চেতনা ও সম্মিলিত সহনশীলতার এক উজ্জ্বল প্রতীক। গত এক দশকে রাজ্যের অর্থনৈতিক অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য বলে জানান খান্ডু। রাজ্যের জিএসডিপি ১৬৬ শতাংশ বেড়েছে, আর রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৮৪ শতাংশ। ব্যক্তিপিছু আয় বেড়েছে ১০৫ শতাংশ, যা উন্নয়নের বাস্তব প্রমাণ।

‘সরকার আপনার দ্বারে’ এবং ‘সেবা আপনার দ্বারে ২.০’-এর মাধ্যমে সরকার সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছেছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। এই উদ্যোগে ১১০০-রও বেশি ক্যাম্পের মাধ্যমে ১৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন।

আগামী ৩ সেপ্টেম্বর ইটানগরে অনুষ্ঠিত হতে চলা ‘নর্থ ইস্ট এভিয়েশন সামিট’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই সম্মেলন অরুণাচলের বিমান চলাচল খাতে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক হবে এবং এতে নতুন বিনিয়োগ ও যোগাযোগের সুযোগ তৈরি হবে।

রাজ্য সরকার ‘অরুণাচল প্রদেশ স্টেট ইউথ পলিসি ২০২৫’ ঘোষণা করেছে বলেও জানান তিনি। এই নীতির মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষা, টেকসই চাকরি, দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র, সুস্থ জীবনযাপন, খেলাধুলা, সংস্কৃতি সংরক্ষণ এবং যুব নেতৃত্ব গড়ে তোলা হবে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, অরুণাচলকে “বিশ্বের অর্কিড রাজধানী” করে তুলতে সম্পূর্ণ অর্কিড ভ্যালু চেইন গড়ে তোলা হবে, যাতে বিশ্ববাজারে এই ফুলের স্থান তৈরি হয়।

সবশেষে তিনি বলেন, অরুণাচলের বিপুল জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনার মাধ্যমে ভারত সর্বাধিক কার্বন ক্রেডিট উৎপাদনের সামর্থ্য অর্জন করতে পারে, যা জলবায়ু পরিবর্তন রোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। বিশ্বে কার্বন মার্কেট ১০ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়াতে চলেছে, আর এই সবুজ অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে অরুণাচলকে স্থাপন করাই আমাদের লক্ষ্য।