গুয়াহাটিতে প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস, নগর বন্যা মোকাবিলায় প্রশাসনের প্রস্তুতি, দেশের অন্যান্য রাজ্যেও বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে আইএমডি

গুয়াহাটি , ১৩ আগস্ট : ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর (আইএমডি) বুধবার গুয়াহাটির জন্য প্রবল বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে। আগামী কয়েক দিন শহরজুড়ে মেঘলা আকাশ, ঘনঘন বৃষ্টিপাত ও বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এতে শহরের জলাবদ্ধতা ও নগর বন্যার আশঙ্কা বেড়েছে।

আইএমডি সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মৌসুমে ইতিমধ্যে গুয়াহাটিতে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত ২৭ জুলাই একদিনেই শহরে ১১১.৪ মিমি বৃষ্টি হয়েছে, যার জেরে একাধিক এলাকায় মারাত্মক জলজটের সৃষ্টি হয়েছিল। মাটি ইতিমধ্যেই জলপ্লাবিত (স্যাচুরেটেড) হয়ে থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেও শহরের নিচু এলাকাগুলিতে দ্রুত জল জমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশেষভাবে জলাবদ্ধতার ঝুঁকিতে রয়েছে অনিল নগর, নবীন নগর, জিএস রোড আন্ডারপাস, রুক্মিণীগাঁও, বেলতলা এবং জু রোড তিনিয়ালি। এগুলির অতীতে ভারী বৃষ্টির পরে জল জমে যাওয়ার নজির রয়েছে। একই সঙ্গে, শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ভরালু ও বশিষ্টা নদীও সতর্কতামূলক নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

আইএমডি ১৫ আগস্ট, স্বাধীনতা দিবসের দিনটিকে “উচ্চ বৃষ্টির সম্ভাবনাময় দিন” হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এতে শহরের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আঞ্চলিক আবহাওয়া কেন্দ্রের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, “মাটি ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণভাবে স্যাচুরেটেড। এর ওপর যদি ভারী বৃষ্টি ও উজানে জলপ্রবাহ একসঙ্গে ঘটে, তাহলে শহরে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়া একেবারে অসম্ভব নয়।”

প্রশাসনের পক্ষ থেকে গুয়াহাটি পৌর কর্পোরেশন (জিএমসি)-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে দ্রুত নিকাশি ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতা দূর করা হয় এবং বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলিতে ডিউয়াটারিং পাম্প মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি নাগরিকদের জন্য আইএমডি-র “মৌসম” মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করতে এবং সম্ভাব্য পরিস্থিতির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদদের মতে, আগস্টের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরের শুরু পর্যন্ত আসামে সাধারণত সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। তাঁদের পূর্বাভাস, সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে বর্ষা বিদায় নেওয়ার আগে গুয়াহাটি অন্তত আরও দুই থেকে তিনবার অতি ভারী বৃষ্টির সম্মুখীন হতে পারে — যার মধ্যে প্রতিবারেই ১০০ মিমি-র বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে আগামী এক মাস শহরজুড়ে বন্যার ঝুঁকি তীব্র থাকবে।

দেশজুড়ে একাধিক রাজ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রবল বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস এবং সতর্কতা জারি করেছে। তেলেঙ্গানার কেন্দ্রীয় জেলাগুলি — সংগারেড্ডি, মেদক, ভিকারাবাদ, খাম্মাম ও মুলুগু — এর জন্য ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। হায়দরাবাদ শহরে ইতিমধ্যেই ভারী বৃষ্টির প্রভাবে জলজট, যানজট এবং সাধারণ জনজীবনে ব্যাঘাত ঘটেছে।

অন্ধ্রপ্রদেশে আগামী সাত দিন — অর্থাৎ ১৯ আগস্ট পর্যন্ত — বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলিতে বজ্রসহ ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণ উপকূলীয় অন্ধ্রপ্রদেশ অঞ্চলে ১৩ আগস্ট অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। একই সময়ে উত্তর উপকূলীয় অন্ধ্রপ্রদেশ , ইয়ানাম এবং রায়লসীমা এলাকাতেও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এসব অঞ্চলে ৫০–৬০ কিমি প্রতি ঘণ্টা বেগে দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

ওড়িশার কোরাপুট ও মালকানগিরি জেলায় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ১৩ ও ১৪ আগস্ট বজ্রসহ ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এই দুই জেলায় আইএমডি কমলা সতর্কতা জারি করেছে, যেখানে ৩০–৪০ কিমি প্রতি ঘণ্টা বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে বলে জানানো হয়েছে।

হিমাচল প্রদেশে টানা বৃষ্টির কারণে দুটি জাতীয় সড়কসহ মোট ৩২৮টি রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে মান্ডি জেলায় ১৮০টি এবং কুল্লুতে ৭৪টি রাস্তা রয়েছে। ১৪ আগস্ট চম্বা, কাংড়া ও মান্ডি জেলায় অতি ভারী বৃষ্টির জন্য কমলা সতর্কতা এবং অন্যান্য জেলাগুলিতে হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

উত্তর-পূর্ব ভারত ও হিমালয় সংলগ্ন রাজ্য যেমন হিমাচল, উত্তরাখণ্ড, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং সিকিমে ‘নিম্ন থেকে মাঝারি’ মাত্রার আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। আইএমডি-এর ন্যাশনাল ফ্ল্যাশ ফ্লাড গাইডেন্স বুলেটিন অনুসারে, এইসব অঞ্চলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ১৮০ মিমি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে। একইসঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬২ মিমি বৃষ্টিপাতের কারণে ভূমির জলধারণ ক্ষমতা ৮৫–৯৯ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, যা বন্যার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলেছে। সব মিলিয়ে, আগামী কয়েকদিন দেশজুড়ে একাধিক রাজ্যে আবহাওয়া পরিস্থিতি অস্বস্তিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ হতে চলেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন ও প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।

গুয়াহাটি সহ ভারতের একাধিক রাজ্যে মৌসুমি বৃষ্টিপাত প্রবল আকার নিতে চলেছে। প্রশাসন ও আবহাওয়া দফতর একযোগে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। নাগরিকদের উদ্দেশে বারবার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, তারা যেন আবহাওয়া সংক্রান্ত আপডেটের উপর নজর রাখেন, প্রয়োজনে নিরাপদ স্থানে সরে যান এবং সরকারি নির্দেশিকা মেনে চলেন।