ভুবনেশ্বর, ৯ আগস্ট :ওড়িশার ভুবনেশ্বরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে রক্ষা বন্ধন উদযাপনের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে এক নার্সের রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে। হাসপাতালের বাথরুম থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়, এবং তার শরীরে একটি সূঁচ ঢোকানো অবস্থায় পাওয়া যায়। এই ঘটনার পর থেকেই রহস্য সৃষ্টি হয়েছে, এবং পরিবারের পক্ষ থেকে হাসপাতালে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবহেলা ও অব্যাখ্যাত বিলম্বের অভিযোগ তোলা হয়েছে।
শনিবার (৭ অক্টোবর) ভুবনেশ্বরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের নার্স কাজ করতে করতে বাথরুমে অচেতন অবস্থায় পড়ে যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে প্রথমে জানানো হয়েছিল যে, তাকে বাথরুমে অচেতন অবস্থায় পাওয়া গেছে। কিন্তু পরে, পুলিশ তদন্তে জানতে পারে যে, নার্সের হাতে একটি সিরিঞ্জ পাওয়া গেছে, যা আত্মহত্যার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সেই সঙ্গে তার শরীরে একটি সূঁচ ঢোকানো ছিল, যা স্বাভাবিক মৃত্যুর চিহ্ন নয়।
নার্সের ভাই এনডিটিভিকে জানান, “আমরা প্রথমে জানতে পারি যে, তাকে বাথরুমে অচেতন অবস্থায় পাওয়া গেছে। কিন্তু পরে পুলিশ জানিয়েছে যে, তার হাতে সিরিঞ্জ পাওয়া গেছে, যা আত্মহত্যার দিকে ইঙ্গিত করে। আমি জানি না তার জীবনে এমন কোনো ঘটনা ঘটেছিল, যা তাকে এই চরম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছে।”
মৃত নার্সের পরিবার জানিয়েছে, কিছু ঘণ্টা আগে তারা ফোনে কথা বলেছিলেন এবং তিনি অত্যন্ত খুশি ছিলেন কারণ রক্ষা বন্ধন উদযাপন করতে তিনি তার গঞ্জাম জেলার বাড়িতে ফিরে যেতে চলেছিলেন। তার ভাই জানান, “তার কোনো ব্যক্তিগত বা পেশাগত সমস্যা ছিল না, তাই এই ধরনের পদক্ষেপের কারণ বুঝে উঠতে পারছি না। আমরা সন্দেহ করি যে, হাসপাতালে তার মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে কিছু গোপনীয়তা থাকতে পারে।”
পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন যে, নার্সের মৃতদেহ পাওয়ার পর দুই ঘণ্টা পর্যন্ত তাদেরকে জানানো হয়নি। তারা দাবি করেছেন যে, হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করছে এবং তাদের পর্যাপ্ত সহায়তা দিতে সময় নিয়েছে।
এই রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ একটি তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ জানিয়েছেন, তারা ঘটনাটির বিভিন্ন দিক থেকে তদন্ত করছে। তাদের অনুসন্ধান চলছে, যেখানে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু, স্বাস্থ্যগত সমস্যা, সম্পর্কের জটিলতা, কর্মস্থলে হয়রানি, এবং পারিবারিক সমস্যার মতো বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
এছাড়া, হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে, যা পুলিশ পর্যালোচনা করছে। একইভাবে, হাসপাতালের কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে। পুলিশ তদন্তের ফলাফল অনুযায়ী, ঘটনাটি আত্মহত্যা, দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু, বা অন্য কোনো কারণে ঘটেছে কিনা তা নির্ধারণ করবে।
এই ঘটনাটি বেশ সাদৃশ্যপূর্ণ, কারণ এর আগেও ৩০ মে, ওড়িশার কাটাকেও এক নার্সের রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে। তার মৃত্যু নিয়ে তদন্ত শুরু হলেও, এখনও পর্যন্ত পুরো ঘটনা পরিষ্কার করা সম্ভব হয়নি।
এটি আবারও একটি বড় প্রশ্ন তুলে ধরছে যে, এমন গুরুত্বপূর্ণ এবং সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার যথাযথ তদারকি কি পর্যাপ্ত? নার্সের পরিবারের অভিযোগ এবং হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের ভূমিকা পুরো বিষয়টিকে আরো রহস্যময় করে তুলেছে।
এই ঘটনায় পুলিশ তদন্তের পাশাপাশি, নার্সের পরিবারও তার মৃত্যু নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলছে। তাদের দাবি, হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং সময়মতো জানানো না হওয়ার কারণে অনেক কিছু ধোঁয়াশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামীদিনে তদন্তের ফলাফল আসলে আরও পরিষ্কার হবে।

