উত্তরাখণ্ডে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত ধরালি, বহু প্রাণহানি ও নিখোঁজ, সেনা ও উদ্ধার বাহিনী তৎপর

উত্তরকাশি, ৫ আগস্ট : উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশি জেলার ধরালি গ্রামে মঙ্গলবার রাতে প্রবল মেঘভাঙার ঘটনা ঘটে। প্রবল বর্ষণের ফলে খীরগঙ্গা নদীতে হঠাৎ জলস্ফীতি দেখা দেয়। ফলস্বরূপ পাহাড়ি ধসে ও মাটির স্রোতে গ্রাম ও আশপাশের অঞ্চল কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০-২৫টি হোটেল ও হোমস্টে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে, বহু মানুষ মারা গেছেন এবং এখনও পর্যন্ত ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন।

বিপর্যয়ের পর সেনাবাহিনী, এনডিআরএফ, আইটিবিপি, এসডিআরএফ এবং দমকল বাহিনী উদ্ধার ও ত্রাণকার্যে নেমেছে। রাতভর চলা অভিযানে ১৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, উদ্ধারকাজ আরও দ্রুত চালাতে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে দুটি এমআই এবং একটি চিনুক হেলিকপ্টার চাওয়া হয়েছে।

খীরগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক কল্প কেদার মন্দিরও এই দুর্যোগে মাটির নিচে চাপা পড়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগেও ১৯ শতকে একবার এই মন্দির একইভাবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এই অঞ্চল ঘিরে থাকা ধরালি বাজারও সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে। হর্ষিল সেনা ক্যাম্পের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তেলগাড় নদীও প্রবল বেগে বইছে, যার ফলে ক্যাম্পে জল ঢোকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

আবহাওয়াবিদদের মতে, মেঘভাঙা হল একটি স্থানীয় প্রাকৃতিক ঘটনা, যেখানে অতি স্বল্প সময়ে অতি ভারী বর্ষণ হয়। সাধারণত ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়, তা কয়েক মিনিটেই নেমে আসে। এর ফলে আকস্মিক বন্যা, ভূমিধস ও মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। কিউমুলোনিম্বাস নামক ভারী মেঘপুঞ্জ তৈরি হয়ে, সেখান থেকে তীব্র বর্ষণ নামে এবং এতে পাহাড়ি অঞ্চলে ধস নেমে আসে।

বর্তমানে মেঘভাঙার নির্দিষ্ট পূর্বাভাস দেওয়ার কোনও নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তি নেই। কারণ এই ঘটনা ছোট পরিসরে ও হঠাৎ ঘটে। তবে আবহাওয়ার উপগ্রহ চিত্র ও রাডার পর্যবেক্ষণ করে সম্ভাব্য বিপদের স্থান চিহ্নিত করা যেতে পারে। আবহাওয়া দফতরের তরফে মঙ্গলবার রাত থেকেই উত্তরাখণ্ডে ‘লাল সতর্কতা’ জারি করা হয়েছে।

আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তরকাশি, টেহরি, পিথোরাগড়, চমোলি, রুদ্রপ্রয়াগ, চম্পাওয়াত, বাগেশ্বর, নৈনিতাল, এবং উদ্যম সিং নগর জেলায় রেড ও অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। কিছু এলাকায় বজ্রপাত ও ভূমিধসেরও আশঙ্কা করা হচ্ছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধার ও ত্রাণকার্য অব্যাহত রয়েছে এবং প্রশাসন পরিস্থিতির উপর নিবিড় নজর রাখছে।