ইম্ফল , ৪ আগস্ট : একটি বড় আকারের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে রবিবার মণিপুর রাজ্যের বিভিন্ন অংশ থেকে চারটি নিষিদ্ধ গোষ্ঠীর মোট আট জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। পুলিশ জানায়, এই অভিযানের ফলে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে বড় ধরনের সাফল্য এসেছে, তবে জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করার জন্য তদন্ত চলমান রয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রথম অভিযানটি ছিল কিপি (পিডব্লিউজি) গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। পাঁচ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যারা ইম্ফল পশ্চিম, ইম্ফল পূর্ব এবং বিশনপুর জেলা থেকে আটক হয়। এই পাঁচজনের মধ্যে ছিলেন—এম প্রেমকুমার সিং (২৮), ইয়াম্বেম শিতাল সিং (৩৯), সরোখৈবাম ইনাওটন সিং (৩৮), খঙবন্তাবাম ইনাওচা দেবী (৫২), এবং অইনাম নাওবা সিং (১৮)। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, গুলি চালানো, অপহরণ এবং বেআইনি অস্ত্রের দখলে থাকার অভিযোগ রয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে একটি ৯ মিমি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন এবং একটি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে, যা তাদের অপরাধমূলক কার্যকলাপের প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পুলিশ জানায়, এই জঙ্গিরা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারের পাশাপাশি জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত ছিল।
একটি পৃথক অভিযানে, কিপি (তৈবাংগানবা) গোষ্ঠীর সদস্য হেইসনাম বোবো সিং (৩৭)-কে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ইম্ফল পশ্চিমের হাওবাম মাকড়ক থেকে আটক হন। পুলিশের দাবি, তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে চাঁদাবাজি এবং হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগও রয়েছে, এবং তার গ্রেপ্তার রাজ্যে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে বড় ধরনের পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এছাড়া, নিরাপত্তা বাহিনী প্রিপ্যাক গোষ্ঠীর সদস্য সরোখৈবাম রোহিত মেইতী (২৪)-কেও গ্রেপ্তার করেছে। তিনি ইম্ফল পূর্বের ইথাম থংখঙ থেকে আটক হন। পুলিশের মতে, রোহিত মেইতী এই নিষিদ্ধ গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে যুক্ত ছিলেন এবং জনসাধারণকে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করতেন। তার গ্রেপ্তার রাজ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
আরেকটি বড় সাফল্য হিসেবে, কিপি (নয়ন) গোষ্ঠীর সদস্য নেপ্রাম হরি মেইতী (১৯)-কেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি ইম্ফল পূর্বের লামলাই চিংখুতে তার বাড়ির কাছের একটি খামার থেকে ধরা পড়েন। পুলিশের মতে, নেপ্রাম হরি মেইতী একাধিক সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন এবং তার গ্রেপ্তার সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানটির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
পুলিশ জানিয়েছে, এই আটজন জঙ্গি সক্রিয়ভাবে অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল এবং তাদের গ্রেপ্তার রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে। তবে, পুলিশ আরও জানায়, এই অভিযানটি শুধুমাত্র এক দফা গ্রেপ্তারি অভিযান ছিল। বর্তমানে তদন্ত চলছে, যাতে তাদের নেটওয়ার্ক, সম্পর্ক এবং পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করা যায়। নিরাপত্তা বাহিনী নিশ্চিত করেছে যে, তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র এবং অন্যান্য জিনিসের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিস্তৃতি আরও পরিষ্কার হতে পারে।
মণিপুর রাজ্যে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানগুলো এখন আরও জোরদার হচ্ছে, যেখানে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী একযোগভাবে কাজ করছে। তবে, রাজ্যের জনগণ এবং সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যাতে সন্ত্রাসবাদ এবং অবৈধ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া যায়।
পুলিশ আশা করছে, এই অভিযানগুলি ভবিষ্যতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আরও বড় ধরনের সাফল্য আনবে এবং রাজ্যে একটি স্থিতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতি বজায় থাকবে।

