গুয়াহাটি, ৪ আগস্ট : কংগ্রেসের এমপি গৌরব গগৈ সোমবার বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ করে অভিযোগ করেন যে, বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের বাঙালি ভাষাভাষীদের, বিশেষ করে ত্রিপুরা, মেঘালয় এবং অসমের বরাক উপত্যকায় বসবাসকারী বাঙালিদের অবমাননা করছে। গগৈ বলেন, বিজেপির এই ধরনের আচরণ বাংলাভাষী জনগণের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করার লক্ষ্যে পরিচালিত একটি গভীর ষড়যন্ত্র।
গৌরব গগৈ তার একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বিজেপির প্রতি কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “বিজেপির অহংকার তাদের চোখে অন্ধত্ব এনে দিয়েছে, যার ফলে তারা পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের বাঙালি জনগণের অবমাননা করছে।” তিনি আরও বলেন, “বিজেপি প্রথমে সিএএ-এর মাধ্যমে বাঙালিদের তাদের পরিচয় প্রমাণ করতে বাধ্য করেছিল এবং এখন তাদের ভাষাকে বিদেশি হিসেবে অবমাননা করছে।”
গগৈ অভিযোগ করেন, বিজেপি এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে চায় যেখানে জাতিগত এবং ভাষাগত পরিচয়ে বিভাজন সৃষ্টি করা যায়। “বিজেপি একত্রিত ভারতের পক্ষ নিয়ে নয়, তারা শুধুমাত্র পুরনো ক্ষত আবার উন্মুক্ত করতে চায়,” বলেন তিনি। গগৈয়ের মতে, বিজেপির এই নীতি দেশটির বৈচিত্র্য এবং ঐক্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।
এই মন্তব্যের সূত্রপাত ঘটেছে বিজেপির আইটি সেলের পশ্চিমবঙ্গের কো-ইনচার্জ অমিত মালভিয়া দ্বারা প্রদত্ত এক বিতর্কিত বিবৃতির পর। মালভিয়া দিল্লি পুলিশের একটি প্রতিবেদনে “বাংলাদেশি ভাষা” শব্দটি ব্যবহারের পক্ষে সমর্থন প্রদান করেন, যেখানে ওই ভাষাটি “অবৈধ অভিবাসী চিহ্নিত করার জন্য” ব্যবহৃত হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
মালভিয়া বলেন, “এটা কোনোভাবেই বাঙালি ভাষার বিরুদ্ধে আক্রমণ নয়।” তিনি আরও বলেন, এটি “একটি বিশেষ ভাষার ধরন, ব্যাকরণ এবং বাক্য গঠন” বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, যা অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। তিনি দাবি করেন, দিল্লি পুলিশের রিপোর্টের মধ্যে কোনো ভুল ছিল না এবং এই শব্দ ব্যবহার নিয়ে যত সমালোচনা, তা একেবারেই অযৌক্তিক।
এদিকে, মালভিয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি পুলিশের প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছেন এবং এর ফলে নতুন একটি ভাষাগত সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়েছে। মালভিয়া মমতাকে “বিপজ্জনকভাবে উসকানিমূলক” বলে অভিহিত করেন এবং তার বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন।
তবে, গৌরব গগৈ এই বিতর্কের মধ্যে আরও একটি বৃহত্তর সাংস্কৃতিক আক্রমণ দেখছেন। তিনি বলেন, বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলেছেন, তা শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক বিতর্ক নয়, বরং এটি বাঙালি ভাষাভাষী জনগণের পরিচয়ে আঘাত। তিনি বলেন, “দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে পরিণত করা হচ্ছে বাংলাভাষীদের।” গগৈ উল্লেখ করেন, “বাংলা ভাষায় কথা বলা লাখ লাখ ভারতীয় নাগরিকের ওপর এই আচরণে তাদের সংস্কৃতি এবং ভাষার প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ পায়।”
গগৈ আরও বলেন, এই ধরনের মন্তব্যের ফলে সাধারণ জনগণের মধ্যে বিভাজন আরও গভীর হতে পারে এবং এটি ভারতীয় জাতীয় ঐক্যের প্রতি এক বড় বিপদ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এখানে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্পষ্ট হচ্ছে, যেখানে বিজেপি এবং কংগ্রেসের মধ্যে ভাষা, পরিচয়, এবং নাগরিকত্ব নিয়ে তীব্র মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। গগৈর মন্তব্যের মাধ্যমে তা আরো স্পষ্ট হয়েছে যে, বিজেপির ভাষাগত রাজনীতি শুধুমাত্র এক রাজনীতি হিসেবে সীমাবদ্ধ না থেকে সাংস্কৃতিক ও জাতীয় ঐক্যের মধ্যে গহ্বর সৃষ্টি করছে।
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বক্তব্যের পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, বিজেপির শাসনে বাঙালিরা কখনও নিজেদের ভাষার প্রতি সম্মান লাভ করেনি। তিনি দাবি করেন, বিজেপি যে দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে তা দেশের বৈচিত্র্য ও একত্বের বিরুদ্ধে এবং এটি বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে একটি সুপরিকল্পিত আক্রমণ।
এভাবে, এই বিতর্ক ভাষা, পরিচয়, এবং নাগরিকত্বের প্রসঙ্গে ভারতের রাজনীতিতে নতুন প্রশ্ন তুলেছে, যার প্রভাব ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত হতে পারে।

