পাকিস্তানকে প্রধানমন্ত্রী মোদির ‘ব্রহ্মোস’ হুঁশিয়ারি: ‘উত্তরপ্রদেশে তৈরি ক্ষেপণাস্ত্রই ধ্বংস করবে সন্ত্রাসবাদীকে’

নয়াদিল্লি, ২ আগস্ট : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শনিবার পাকিস্তানকে এক কঠোর বার্তা দিয়েছেন, জানিয়ে দিয়েছেন যে যদি ভবিষ্যতে পাকিস্তান কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের চেষ্টা করে, তবে ভারত প্রতিশোধ নেবে তার নিজস্ব অস্ত্র ব্যবস্থার মাধ্যমে। উত্তরপ্রদেশের বারাণসী শহরে এক শক্তিশালী ভাষণে মোদি ঘোষণা করেছেন যে, ভারতের স্বদেশী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, বিশেষত ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র, এখন লখনউতে তৈরি হবে এবং এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি পাকিস্তানকে মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে।

প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, “ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র এখন লখনউতে তৈরি হবে। এবং যদি পাকিস্তান আবার কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে, তবে উত্তরপ্রদেশে তৈরি ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র সেই সন্ত্রাসবাদীদের ধ্বংস করবে।” তিনি ভারতীয় প্রতিরক্ষা ক্ষমতার উপর অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী এবং জানান, ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রগুলি বিশ্বের সর্বাধিক আধুনিক ও শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্রগুলির মধ্যে একটি, যা পাকিস্তান সহ বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুঁশিয়ারি।

প্রধানমন্ত্রী মোদি তার ভাষণে ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা এবং স্বদেশী অস্ত্র তৈরির সক্ষমতার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “অপারেশন সিন্ধুর সময়, আমরা বিশ্বের সামনে আমাদের স্বদেশী অস্ত্রের ক্ষমতা প্রদর্শন করেছি। আমাদের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, ক্ষেপণাস্ত্র, এবং ড্রোনগুলি বিশ্বের সামনে ‘আত্মনির্ভর ভারত’ শক্তির উদাহরণ হয়ে উঠেছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলির মতো ভারতও এখন নিজের শক্তি এবং প্রতিরক্ষা সামগ্রী তৈরির পথে এগিয়ে চলেছে।”

প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, “এখন পাকিস্তানে, শুধু ব্রহ্মোস নাম শুনলেই তারা রাতের ঘুম হারায়। এই অস্ত্রের শক্তি তাদের জন্য আতঙ্কের কারণ।” তিনি আরও বলেন, “অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং শক্তিশালী অস্ত্র তৈরি করার ক্ষেত্রে ভারতকে আর কোনো দেশ নির্ভর করতে হবে না।”

মোদি তার বক্তব্যে আরো বলেন যে, উত্তরপ্রদেশে প্রতিরক্ষা শিল্পের ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। তিনি জানিয়ে দেন যে, “অনেক বড় প্রতিরক্ষা সংস্থা উত্তরপ্রদেশের প্রতিরক্ষা করিডোরে তাদের উৎপাদন কারখানা স্থাপন করছে।” এটি ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে ব্যাপক উন্নয়ন এবং আত্মনির্ভরতার দিকে এক বড় পদক্ষেপ। “এখন ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ অস্ত্রগুলি শীঘ্রই আমাদের বাহিনীর শক্তি হয়ে উঠবে,” বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

ভারতের জাতীয় ঐক্য এবং অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী মোদি বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেছেন, “বিশ্বের মধ্যে অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং প্রতিটি দেশ এখন তাদের নিজেদের স্বার্থে মনোযোগী। ভারত শীঘ্রই পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠবে, এবং এই জন্য ভারতকে তার অর্থনৈতিক স্বার্থে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।” মোদি দেশের ভবিষ্যতের জন্য এক কঠোর অথচ আত্মবিশ্বাসী মনোভাবের কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন যে দেশের শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য প্রতিটি নাগরিককে একযোগে কাজ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী মোদি তার বক্তব্যে রাজনৈতিক ঐক্যের উপরও গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, “যারা দেশের উন্নতি চান এবং ভারতকে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে দেখতে চান, তারা যেকোনো রাজনৈতিক দলই হোন, তাদের সব পার্থক্য দূর করে ‘স্বদেশী’ পণ্যগুলির জন্য একতাবদ্ধ হওয়া উচিত।” তিনি আরও বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলির উচিত একে অপরের প্রতি ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে জাতির কল্যাণের জন্য একযোগে কাজ করা।”

এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী মোদি দেশের নাগরিকদের জন্য ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ পণ্য কেনার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আমরা শুধুমাত্র এমন জিনিসই কিনব যা ভারতীয়রা তৈরি করেছে। আমরা ‘লোকাল ফর ভোকাল’ হতে চাই। আমাদের দেশে উৎপাদিত পণ্যগুলোকে সমর্থন করতে হবে।” তিনি বলেন, “অর্থনৈতিক শক্তি অর্জন করতে হলে আমাদের নিজেদের পণ্যকে সম্মান জানাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ পণ্যের চাহিদা বাড়াতে হবে।”

প্রধানমন্ত্রী মোদি দেশের জনগণকে আত্মনির্ভরতার পথে চলতে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “এটি দেশের সাফল্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমাদের নিজেদের পণ্য এবং শিল্পগুলিকে সম্মানিত করতে হবে।”

এছাড়া, ভারতীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের উন্নতির পাশাপাশি দেশীয় প্রযুক্তি ও গবেষণায় প্রচুর বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়ে মোদি সরকার বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদির এই মন্তব্যের ফলে ভারতীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে উৎসাহ এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে।

এভাবে, ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করে যে, ভারতের ভবিষ্যত শুধুমাত্র তার শক্তিশালী প্রতিরক্ষা সামগ্রী এবং প্রযুক্তিতে নয়, বরং তার জাতীয় ঐক্য এবং আত্মনির্ভরতার উপরেও নির্ভরশীল।