পানাজি, ২ আগস্ট : গোয়া বিধানসভা শুক্রবার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস করেছে, যা রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে জনসাধারণের শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অননুমোদিত কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। নতুন এই আইনটি পর্যটন খাতে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী রোহন কাঁহুন্টে ‘গোয়া ট্যুরিস্ট প্লেসেস (প্রোটেকশন অ্যান্ড মেইনটেনেন্স) অ্যামেন্ডমেন্ট বিল, ২০২৫’ পেশ করেন। এই বিলটি ২০০১ সালের আইনের একটি সংশোধন হিসেবে পাস হয়, যা “নুসেন্স” বা জনদুর্ভোগের সংজ্ঞা অনেক বেশি বিস্তৃত করেছে এবং জরিমানা সীমা ৫,০০০ টাকা থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিলটির উদ্দেশ্য হলো রাজ্যের পর্যটন স্থানগুলোতে অননুমোদিত কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা এবং এর মাধ্যমে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও স্বস্তি নিশ্চিত করা। নতুন আইনে “নুসেন্স” বা জনদুর্ভোগের সংজ্ঞায় অনেক নতুন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অননুমোদিত জায়গায় মদ্যপান বা কাচের বোতল ভাঙা, যা পর্যটকদের জন্য অস্বস্তি সৃষ্টি করে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি আরোপ করা হবে। এছাড়া, খোলা জায়গায় রান্না করা বা আবর্জনা ফেলা, যা পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে, তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পর্যটকদের বাধ্য করে বা বিরক্ত করে কোনো পণ্য বা সেবা কেনার জন্য চাপ দেওয়া অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। জলক্রীড়া বা টিকিট বিক্রির মতো কার্যক্রম নির্ধারিত জায়গার বাইরে করা যাবে না এবং এসব ক্ষেত্রে শাস্তি দেওয়া হবে। একইভাবে, অননুমোদিত হকারিং, ভিক্ষাবৃত্তি বা সৈকতে যানবাহন চালানোর মতো কার্যক্রমে যুক্ত হলে শাস্তি পেতে হবে। রাজ্যের বাইরে পর্যটন সেবা বিক্রি করা, যা অনুমতি ছাড়াই করা হচ্ছে, তাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই সব কর্মকাণ্ড অবিলম্বে শাস্তিযোগ্য হবে, এবং অপরাধীরা জরিমানা বা অন্যান্য শাস্তির মুখোমুখি হতে পারবেন।
এখন থেকে, এই ধরনের নুসেন্স বা জনদুর্ভোগের অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। ধারা ১০ অনুযায়ী, অপরাধীদের কমপক্ষে ৫,০০০ টাকা জরিমানা করা হবে, যা পরবর্তী সময়ে ১ লাখ টাকায় বাড়ানো যেতে পারে। এর সাথে যোগ করা হয়েছে ভারতীয় দণ্ডবিধি, ২০২৩-এর ধারা ২২৩ অনুযায়ী, জনসাধারণের সহায়তায় বাধা দেওয়া বা তাদের আন্দোলনে বাধা দেওয়ার অভিযোগে শাস্তি।
এছাড়াও, ধারা ১০এ যুক্ত করা হয়েছে, যা সরকারের জন্য দুই বছর পর পর জরিমানা পর্যালোচনা করার নির্দেশ দেয়। এই পর্যালোচনার মাধ্যমে জরিমানার পরিমাণ ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে, যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুপারিশের ভিত্তিতে কার্যকর হবে।
বিলটির প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, গোয়ায় পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা পরিবেশের উপর চাপ সৃষ্টি করছে এবং অনেক সময় জনসাধারণের শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনা ঘটছে। এই পরিবর্তিত পরিস্থিতি ও বাড়তে থাকা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে পর্যটকদের অভিজ্ঞতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এবং কিছু কিছু অঞ্চলে পরিবেশও হুমকির মুখে পড়ছে।
বিলটির উদ্দেশ্য হলো “দায়বদ্ধ এবং পুনর্জীবিত পর্যটন” চালু করা, যাতে গোয়া একটি নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন এবং অতিথিপরায়ণ পর্যটন গন্তব্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পারে। রাজ্য সরকার আশা করছে যে এই আইনটি পর্যটন শিল্পে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনবে এবং গোয়ার পর্যটন স্থানগুলোতে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়তা করবে।
মন্ত্রী রোহন কাঁহুন্টে বিলটি পেশ করার সময় বলেন, “গোয়া পর্যটকদের জন্য অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্যস্থল এবং আমরা চাই যেন এটি আরও পরিষ্কার, নিরাপদ এবং অতিথিপরায়ণ স্থানে পরিণত হয়।” তিনি উল্লেখ করেন, এই বিলটি শুধুমাত্র টাউটিং বা অননুমোদিত ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করবে না, বরং এটি গোয়ার পর্যটন খাতকে আরও উন্নত এবং সুসংগঠিত করবে।
তিনি আরও যোগ করেন, “এটি পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং তাদের অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করবে। এমনকি স্থানীয়দের জন্যও এটি একটি পজিটিভ প্রভাব ফেলবে, কারণ পরিবেশ ও জনসাধারণের শৃঙ্খলা নিশ্চিত হবে।”
এখন থেকে, গোয়ার পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নতুন আইন বাস্তবায়ন শুরু হবে এবং এর প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিত পরিদর্শন এবং মনিটরিং ব্যবস্থা রাখা হবে। এই নতুন আইনের মাধ্যমে গোয়া আশা করছে যে, টাউটিং, বেআইনি কার্যক্রম এবং পর্যটকদের বিভ্রান্তির মতো সমস্যা মোকাবেলা করা সম্ভব হবে, এবং রাজ্যটির পর্যটন খাতের প্রতি বিশ্বস্ততা বাড়ানো যাবে।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে রাজ্য সরকার পর্যটকদের জন্য একটানা নিরাপদ এবং সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করার প্রত্যয়ে এগিয়ে চলেছে, যা গোয়ার উন্নত পর্যটন শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে।

