কলকাতায় বাংলাদেশি মডেল গ্রেপ্তার, ভুয়া আধার, প্যান এবং রেশন কার্ড উদ্ধার

কলকাতা, ২ আগস্ট : কলকাতায় একটি বিমান সংস্থার কেবিন ক্রু এবং ছোট-মাপের মডেল শান্তা পালকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শান্তা পাল ভারতে ভুয়া ভারতীয় নথিপত্র ব্যবহার করে দীর্ঘদিন বসবাস করছিলেন, যা পুলিশের কাছে চাঞ্চল্যকর ঘটনা হিসেবে উঠে এসেছে। মঙ্গলবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার কাছ থেকে ভুয়া আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ভোটার আইডি এবং রেশন কার্ড উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ জানায়, শান্তা পাল ২০২৩ সালে বাংলাদেশের বরিশাল থেকে একটি বৈধ পাসপোর্টে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। কলকাতায় এসে তিনি একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন, যেখানে তিনি একা বসবাস শুরু করেন। তবে, শর্ত ছিল যে, তিনি তার পরিবারের অমতিপূর্ণ সম্পর্কের কারণে আলাদা থাকতে চান। এজন্য তিনি ভুয়া নথিপত্র প্রদান করেন, যাতে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে তার পরিচয় প্রতিষ্ঠিত হয়।

তার দেওয়া নথিপত্রের মধ্যে ছিল আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ভোটার আইডি, এবং অন্য সরকারি পরিচয়পত্র, যার সবগুলোই ভুয়া ছিল। এসব নথি অনুযায়ী, তিনি ১৯৯৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন, যা সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা। শান্তা পাল এই ভুয়া নথিপত্র দিয়েই কলকাতায় বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে বসবাস করতে শুরু করেন।

পুলিশ আরও জানায়, শান্তা পাল ২০২৩ সালের ৫ জুন অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা শায়েক মোহাম্মদ আশরফের সঙ্গে বিয়ে করেন। তাদের বিয়ে পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলায় নিবন্ধিত হয়, যা সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান করছে। শন্তা এবং আশরফ কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নেন এবং পরবর্তীতে গলফ গ্রীন এলাকায় চলে যান।

তবে, এই জুটি শুধু বসবাসই করেনি, তারা একসাথে আরও কয়েকটি ভুয়া নথিপত্র তৈরি করেন এবং যেসব নথি দিয়ে তারা সম্পত্তি ভাড়া নেন তা তদন্তের মাধ্যমে উঠে এসেছে। শান্তা পাল আশরফের পাসপোর্টও নিজের কাছে রেখেছিলেন এবং তার অগোচরে বিভিন্ন ভুয়া পরিচয়পত্র তৈরি করার কাজে ব্যস্ত ছিলেন।

শান্তা পাল বাংলাদেশের পরিচিত মডেল ও অভিনেত্রী। ২০১৬ সালে তিনি ইন্দো-বাংলা বিউটি পেজেন্টে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন এবং ২০১৯ সালে ‘মিস এশিয়া গ্লোবাল’ খেতাব লাভ করেন। এরপর তিনি তামিল এবং বাংলা সিনেমায় কাজ শুরু করেন এবং বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি একটি ওড়িয়া সিনেমাতেও কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শান্তা পাল এবং তার স্বামী আশরফ কলকাতায় একাধিক জায়গায় ভুয়া নথিপত্র দিয়ে সম্পত্তি ভাড়া নিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে প্রতারণা, ভুয়া নথিপত্র তৈরি এবং ভারতীয় আইন ভঙ্গের অভিযোগ। শান্তা পাল বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে আছেন এবং আগামী ৮ আগস্ট পর্যন্ত তার হেফাজতের মেয়াদ থাকবে। পুলিশের তদন্ত চলমান রয়েছে এবং শিগগিরই আরও তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে।

এই ঘটনা ভারতের অভ্যন্তরে অবৈধভাবে বসবাস ও ভুয়া নথিপত্রের বিষয়ে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। পুলিশ প্রশাসন আশা করছে, এই ধরণের অপরাধের মোকাবিলা করার জন্য আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে যাতে ভবিষ্যতে কেউ যাতে এমন অবৈধ কার্যক্রমে যুক্ত না হতে পারে।

বর্তমানে শান্তা পাল-এর বিরুদ্ধে একাধিক আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এবং তার বিরুদ্ধে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তবে, তার মডেলিং এবং অভিনয়ের ক্যারিয়ার একেবারে ধ্বংস হতে পারে, বিশেষত যদি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়।

এই ঘটনা ভারতীয় প্রশাসন এবং নাগরিকদের মধ্যে আরও সচেতনতা বৃদ্ধি করবে, যেন এ ধরনের প্রতারণা এবং অপরাধের ঘটনা কমানো যায়। পুলিশের তরফ থেকে জনগণকে সতর্ক করা হয়েছে যেন তারা কখনও ভুয়া নথিপত্রের মাধ্যমে অজানা কাউকে সাহায্য না করে এবং প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানায়।