মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মার ব্যতিক্রমী কর্মসূচি “চায়ের আড্ডায় জনতার কথা” ধীরে ধীরে রূপ নিচ্ছে এক সামাজিক আন্দোলনে

আগরতলা, ১ আগস্ট: জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মার ব্যতিক্রমী কর্মসূচি “চায়ের আড্ডায় জনতার কথা” ধীরে ধীরে রূপ নিচ্ছে এক সামাজিক আন্দোলনের। বিভিন্ন জনজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল থেকে শুরু করে সমতল গ্রামীণ এলাকাতেও মন্ত্রী পৌঁছে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষের মনের কথা শোনার উদ্দেশ্যে। সম্প্রতি ২৯-নং কৃষ্ণপুর বিধানসভা কেন্দ্রের মুঙ্গিয়াকামি ব্লকের অন্তর্গত ১৮ মুড়া এডিসি ভিলেজের পাদদেশে অবস্থিত ৪৫ মাইল এলাকায় চায়ের আড্ডার এক বিশেষ পর্বে অংশ নেন মন্ত্রী।

এই আড্ডায় উপস্থিত হয়ে মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা সরাসরি শুনলেন স্থানীয় জনগণের সমস্যার বিবরণ। এলাকার মানুষরা তুলে ধরেন বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংকট, জরাজীর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা, রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা এবং কর্মসংস্থানের অভাবের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি। সাধারণ মানুষের এই কথাগুলির গুরুত্ব অনুধাবন করে মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা দ্রুত পদক্ষেপের ঘোষণা দেন। তিনি জানিয়ে দেন, স্থানীয় বাজারে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিধায়ক তহবিল থেকে একটি পাকা মার্কেট শেড নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে, যেখানে এখন মহিলা ও পুরুষ উভয়েই স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

মন্ত্রী এই দৃশ্য দেখে অভিভূত হন এবং বলেন, “মানুষের চোখের হাসিই আমার কর্মের প্রেরণা।”এদিনের আড্ডায় মন্ত্রী বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়ে বলেন, “বাল্যবিবাহ একটি কন্যা শিশুর জন্য অভিশাপ। এতে তাদের মানসিক ও সামাজিক জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এই অনুশীলন বন্ধ করতে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।”

তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যুব সমাজকে নেশার জাল থেকে মুক্ত রাখতে হলে খেলাধুলা ও গঠনমূলক কর্মকাণ্ডের দিকে তাদের মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে হবে।” পাশাপাশি তিনি শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, “শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। আমাদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষিত করে তুলতে পারলেই আমরা আধুনিক সমাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারব। বর্তমান সরকার এই উদ্দেশ্যে একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করেছে।”
মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন এমডিসি ভূমিকা নন্দ রিয়াং। তিনি রিয়াং সম্প্রদায়ের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে প্রত্যেক পরিবারকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।এদিন আরও এক হৃদয়স্পর্শী দৃশ্য সামনে আসে। এলাকার বহু পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বিপিএল কিংবা অন্ত্যোদয় রেশন কার্ড থেকে বঞ্চিত ছিলেন। তারা জানান, বিগত সিপিএম সরকারের আমলে শুধু মিছিলে হাঁটলেই যেন তাদের রেশন কার্ড মিলত— বাস্তবে তারা বঞ্চিতই রয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু এই আড্ডায় মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মাকে সামনে পেয়ে তাঁরা নিজেদের সমস্যার কথা খোলাখুলি জানান। মন্ত্রী নিজে দাঁড়িয়ে যোগ্য পরিবারগুলোর এপিএল কার্ড সংগ্রহ করে তা বিপিএল/অন্ত্যোদয় কার্ডে রূপান্তরের আশ্বাস দেন। সাধারণ মানুষ তাঁকে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। কেউ কেউ বলেন, “বিপদে-আপদে যিনি পাশে থাকেন, তিনিই আপনজন। আজ আমরা আমাদের আপনজনকে পেয়েছি।”এই কর্মসূচির মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো—জনতার দোরগোড়ায় পৌঁছে গেলে মানুষের আস্থা যেমন অর্জন করা যায়, তেমনি প্রকৃত পরিবর্তনের সূচনা হয় মানুষের মন থেকে।