কলকাতা, ২৯ মে : ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং পহেলগাঁও সন্ত্রাস হামলার প্রেক্ষাপটে জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তীব্র আক্রমণ করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নয়, মোদী আজ যেন বিজেপির সভাপতির মতো বক্তব্য রাখছেন।
এদিকে, মুর্শিদাবাদে সাম্প্রতিক হিংসা নিয়ে মোদীর মন্তব্যকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, “তিনি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে রাজ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে চাইছেন।” সেইসঙ্গে তিনি জানিয়ে দেন, তৃণমূল কংগ্রেস যে কোনও সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।
এক সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আজ মোদীজি যা বললেন, তা শুনে আমরা শুধু হতবাক নই, অত্যন্ত মর্মাহত। যখন বিরোধীপক্ষ দেশের স্বার্থে একজোট হয়ে কাজ করছে, তখন প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তাঁর মন্ত্রী বলেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মতো ‘অপারেশন বাংলা’ চালানো হবে। আমি ওদের চ্যালেঞ্জ করছি— সাহস থাকলে কালই ভোট হোক। আমরা প্রস্তুত, বাংলা প্রস্তুত। তবে একটা কথা মনে রাখবেন— সময় বড় জিনিস, সময় মনে রাখতে হবে।”
বিজেপিকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, “ওরা হলো ‘জুমলা পার্টি’। মিথ্যে কথা ছড়িয়ে দেশকে বিভ্রান্ত করছে। ‘অপারেশন সিন্দুর’ নিয়ে রাজনীতি করছে। দেশ লুটে নিচ্ছে, পরে পালিয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের কথা একজন প্রধানমন্ত্রীকে মানায় না। অপপ্রচার করে দেশ চালানো যায় না।”
তিনি আরও বলেন, “এই সময়ে, যখন সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযান চলছে, তখন প্রধানমন্ত্রী দলীয় নেতার মতো ভাষায় রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করছেন। অথচ এই রাজ্য সরকারই আপনাদের পাশে দাঁড়িয়ে দেশরক্ষার কাজ করছে।”
জাতীয় নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কার্যক্রমে বিরোধীপক্ষের ভূমিকা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের প্রতিনিধি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ওই দলে রয়েছেন এবং প্রতিদিন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন। এমন সময়ে, একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, একজন দলীয় নেতা হিসেবে মোদী কথা বলছেন। তিনি এক সরকারকে আক্রমণ করছেন, যে সরকার দেশকে রক্ষা করতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে।” “তখনও মোদীজি বিরোধীদের দোষারোপ করছেন, বিভাজনের রাজনীতি করছেন। এটা প্রধানমন্ত্রীর ভাষা হতে পারে না, এটা দলীয় সভাপতির ভাষা,” বলে কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিজেপিকে নিশানা করে তৃণমূল নেত্রী আরও বলেন, “আপনারা সরকারের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। মিথ্যা কথা বলে বিরোধীদের দোষারোপ করছেন, যেন আপনারা বিজেপি ‘জুমলা পার্টির’ নেতা। শুধু অপপ্রচার করছেন। দেশকে লুটে পালিয়ে যাচ্ছেন। এই ধরনের ভাষা একজন প্রধানমন্ত্রীকে শোভা পায় না।”
এই ঘটনায় রাজ্যের রাজনৈতিক আবহ আরও উত্তপ্ত হয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধের প্রেক্ষিতে আগামী দিনগুলিতে রাজনৈতিক মেরুকরণ আরও গভীর হবে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

