“পুরাণ ও ইতিহাসে ফিরে দেখার সময় এসেছে” — গোয়ায় চরক ও সুশ্রুতের মূর্তি উন্মোচন করলেন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়

গোয়া, ২২ মে: উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় বুধবার গোয়ায় আয়ুর্বেদাচার্য চরক ও শল্যচিকিৎসার জনক সুশ্রুতের মূর্তির উন্মোচন করেন। গোয়া রাজভবনে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে ভারতীয় বেদ, উপনিষদ, পুরাণ ও ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকানোর। তিনি উল্লেখ করেন, আজ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ভারতের প্রাচীন জ্ঞানপদ্ধতির গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে।

উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপরাষ্ট্রপতি বলেন, “আমরা এক অনন্য জাতি, এখন আমরা আমাদের শিকড়কে নতুন করে আবিষ্কার করছি এবং সেই ভিত্তিতেই নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছি।” তিনি বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির গুরুত্বের উপর জোর দেন এবং বলেন, “ভারত এই পদ্ধতির জন্মস্থান। আজও তা বিস্তৃতভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “আমাদের প্রাচীন গ্রন্থ কেবলমাত্র গ্রন্থাগারের তাকের জন্য নয়, এগুলো ভাবনা, দর্শন এবং বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তার আধার। এগুলোকে আধুনিক বৈজ্ঞানিক সরঞ্জামের সহায়তায় পুনরুজ্জীবিত করতে হবে।”

উপরাষ্ট্রপতি আরও বলেন, “সময় এসেছে ইতিহাসে ফিরে তাকানোর। আমাদের শিশুদের জন্ম থেকেই আমাদের সভ্যতার গভীরতা সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে।” চরক ও সুশ্রুতের মূর্তি উন্মোচনের সময় তিনি বলেন, “আজ আমরা এমন দুই মহান ব্যক্তিত্বকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি যারা জ্ঞানের প্রতীক— চরক ও সুশ্রুত।”

চরক ছিলেন কুষাণ সাম্রাজ্যের রাজবৈদ্য এবং তিনি ‘চরক সংহিতা’র রচয়িতা, যা আয়ুর্বেদের মূল ভিত্তি। অপরদিকে, সুশ্রুতেকে শল্য চিকিৎসার জনক হিসেবে গণ্য করা হয়। উপরাষ্ট্রপতি জানান, “আমি সুশ্রুতের সময়ের অস্ত্রোপচারের যন্ত্রের চিত্র দেখেছি— তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল অত্যন্ত দূরদর্শী।” তিনি উল্লেখ করেন, সুশ্রুত ছিলেন ধন্বন্তরির শিষ্য, যিনি নিজেও একজন খ্যাতনামা আয়ুর্বেদাচার্য।

জগদীপ ধনখড় বলেন, “এখনও কিছু কিছু মহলে ‘ভারতীয় বা প্রাচীন’ মানেই ‘পিছিয়ে পড়া’ বলে মনে করা হয়— এই মানসিকতা আর গ্রহণযোগ্য নয়। এখন সময় এসেছে আমরা নিজেদের ঐতিহ্যকে সম্মান করতে শিখি।” তিনি বলেন, পশ্চিমই কেবল অগ্রসর— এই ধারণা এখন বাতিল হওয়া উচিত।

তিনি জানান, “আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও স্বীকার করেছে যে ভারত এখন বিশ্বের সম্ভাবনাময় কেন্দ্র।” উপরাষ্ট্রপতি আরও বলেন, “যদি আমরা আমাদের প্রাচীন জ্ঞানকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারি, তবে পশ্চিমা বিশ্ব বিস্মিত হবে।” তিনি চরক, সুশ্রুত, ধন্বন্তরী, জীবক (যিনি বুদ্ধের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন), প্রাচীন গণিতজ্ঞ আর্যভট্ট, বৌধায়ন, বরাহমিহির— এই সকল মনীষীদের অবদান স্মরণ করেন।

তিনি বলেন, “শত শত বছর আগে আমরা ৩০০-রও বেশি অস্ত্রোপচার, প্লাস্টিক সার্জারি, অস্থিচিকিৎসা এবং এমনকি সিজারিয়ান ডেলিভারিও করতাম। সুশ্রুতের লেখা শুধু শারীরবিদ্যা নয়, বরং বৈজ্ঞানিক মনোভাব, পরিচ্ছন্নতা, প্রশিক্ষণ, ও রোগীর যত্নের উচ্চমানের প্রতিফলন ঘটায়।”