লখনউ, ২২ মে: উত্তর প্রদেশে আগামী ২০২৭ সালে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও, তার আগেই রাজ্যের রাজনৈতিক উত্তাপ ক্রমশ চড়ছে ২০২৬ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক থেকে শুরু করে দলীয় নেতারা এই নির্বাচনকে ২০২৭-এর ‘সেমিফাইনাল’ বলে অভিহিত করছেন। নির্বাচনী কমিশন ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করেছে, এবং সম্ভাব্য সময় হিসেবে ২০২৬ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসকে ধরা হচ্ছে।
রাজ্যের ৫৭,৬৯১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, পঞ্চায়েত সদস্য, ৮২৬টি ব্লকের ব্লক প্রধান, ৩২০০ জেলা পঞ্চায়েত সদস্য এবং ৭৫টি জেলা পঞ্চায়েত সভাপতির নির্বাচন ২০২৬ সালে সম্পন্ন হবে। নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই ৬৭টি জেলায় নির্বাচনের জন্য ১.২৭ লক্ষ সিআর-১ গ্রেডের ব্যালট বাক্স কেনার জন্য ই-টেন্ডার আহ্বান করেছে, যার সরবরাহ আগামী চার মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে।
২০২১ সালে শেষবার অনুষ্ঠিত হওয়া পঞ্চায়েত নির্বাচন ছিল এপ্রিল-মে মাসে। এবার রাজনৈতিক দলগুলি অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। গ্রামে গ্রামে প্রাধান নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ তুঙ্গে, এবং পঞ্চায়েত সদস্য, বিডিসি ও জেলা পঞ্চায়েত সদস্যরাও পোস্টার-হোর্ডিং লাগিয়ে দখল নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
উত্তর প্রদেশের পঞ্চায়েত নির্বাচনকে রাজ্যের রাজনৈতিক গতিপথের নির্ণায়ক হিসেবে দেখা হয়। অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, রাজ্যে যে দল ক্ষমতায় থাকে, তারই প্রভাব পঞ্চায়েত ও নগর নির্বাচনে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়। ২০২১ সালের জেলা পঞ্চায়েত সদস্য নির্বাচনে ৩,০৫০টি আসনের মধ্যে ৯৪৪টি আসন নির্দল প্রার্থীরা দখল করলেও বিজেপি নির্দলদের সমর্থন নিয়ে ৭৫টির মধ্যে ৬৭টি জেলায় জেলা পঞ্চায়েত সভাপতির পদ দখলে রাখতে পেরেছিল।
তালিকাভুক্ত দলগুলোর মধ্যে সপা পেয়েছিল ৭৫৯, বিজেপি ৭৬৮, বসপা ৩১৯, কংগ্রেস ১২৫, আরএলডি ৬৯ এবং আপ ৬৪টি আসন। এতে বোঝা যায়, সুশৃঙ্খল নির্বাচনী কৌশলের মাধ্যমে বিজেপি নির্দল ও ছোট দলগুলোর সমর্থন লাভ করে শক্তি বৃদ্ধি করতে পেরেছে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলি তাদের জনপ্রিয়তা এবং প্রভাবের একটি স্পষ্ট চিত্র পায়। উত্তর প্রদেশের অধিকাংশ বিধানসভা আসন গ্রামীণ অঞ্চলভিত্তিক হওয়ায় পঞ্চায়েত স্তরের ফলাফল থেকে ভোটারদের মনোভাব বোঝা যায়। সাধারণত ৪ থেকে ৬ জন জেলা পঞ্চায়েত সদস্য মিলে একটি বিধানসভা আসনের প্রতিনিধিত্ব করেন।
২০২২ সালের বিধানসভা ও ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করে দলগুলি ভোটের বৃদ্ধি বা হ্রাস বিশ্লেষণ করে এবং সেই অনুযায়ী ২০২৭ সালের জন্য নিজেদের কৌশল সাজায়। প্রতি জেলার ফলাফল, জাতি অনুযায়ী ভোটার বিশ্লেষণ, অঞ্চলভিত্তিক মাপকাঠিতে পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতের রণনীতি নির্ধারণ হয়।
রাজনীতির ময়দানে ২০২৬-এর পঞ্চায়েত নির্বাচন যেন ২০২৭ সালের বৃহৎ লড়াইয়ের পূর্বাভাস। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখন থেকেই প্রস্তুতির হিড়িক পড়েছে। গ্রামের সরকার গঠনের জন্য জোর প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। যে দল পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রাধান্য পাবে, তারই রাজ্যে ২০২৭ সালে জনমত কতটা পক্ষে থাকতে পারে, তার ইঙ্গিত মিলবে এই নির্বাচনের মাধ্যমেই।
এইভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচন শুধু গ্রাম পর্যায়ের ক্ষমতার লড়াই নয়, বরং রাজ্য রাজনীতির ভবিষ্যৎ চিত্র আঁকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হয়ে উঠেছে।

