ট্র্যাভেল ব্লগার জ্যোতি মালহোত্রা গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার, ধৃত আরও পাঁচ

হিসার, ১৭ মে : পাকিস্তানের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ভারতের হরিয়ানার হিসার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ইউটিউব ট্র্যাভেল ব্লগার জ্যোতি মালহোত্রাকে। তিনি ‘ট্র্যাভেল উইথ জো’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনা করতেন। পুলিশ জানিয়েছে, ভারতের সামরিক সংক্রান্ত গোপন তথ্য পাকিস্তানে পাচার করার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই মামলায় পাঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে আরও পাঁচজন, যার মধ্যে একজন ২৫ বছরের ছাত্র এবং এক নিরাপত্তারক্ষীও রয়েছেন, তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

৩৩ বছর বয়সী জ্যোতি, যিনি নিজেকে ইউটিউব বায়োতে “ঘুরে বেড়ানো ভালোবাসেন”, “হারিয়ানভি+পাঞ্জাবি”, এবং “পুরাতন চিন্তার আধুনিক মেয়ে” বলে উল্লেখ করেছেন, তিনি দিল্লিতে পাকিস্তান হাই কমিশনে কর্মরত এহসান-উর-রহিম ওরফে দানিশ-এর সংস্পর্শে আসেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তিনি পাকিস্তানে অন্তত দুইবার গিয়েছিলেন এবং সেখানে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সম্প্রতি পাহালগাম সন্ত্রাসী হামলার পরে ভারতের ‘অপারেশন সিন্দূর’-এর প্রেক্ষিতে দানিশকে ‘পারসোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

তদন্তে জ্যোতি পুলিশকে জানান, ২০২৩ সালে পাকিস্তানের ভিসা নেওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি দিল্লির পাকিস্তান হাই কমিশনে গিয়েছিলেন। সেখানে তার সঙ্গে দানিশের পরিচয় হয়। এরপর তিনি দু’বার পাকিস্তান সফর করেন এবং সেখানে আলি আহওয়ান নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয়, যিনি তার থাকার ও ভ্রমণের ব্যবস্থা করেন।

জ্যোতি পুলিশকে জানান, “পাকিস্তানে আলি আহওয়ানের মাধ্যমে আমি পাক গোয়েন্দা সংস্থার শাকির এবং রানা শাহবাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। সন্দেহ এড়াতে শাকিরের মোবাইল নম্বর আমি ‘জাট রন্ধাওয়া’ নামে সংরক্ষণ করি। দেশে ফিরে আমি হোয়াটসঅ্যাপ, স্ন্যাপচ্যাট ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখি ও গোপন তথ্য আদান-প্রদান করি।” পুলিশ জানিয়েছে, জ্যোতি মালহোত্রার বিরুদ্ধে ভারতের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা ও সংহতির বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এক ইউটিউব শর্টসে, যা মার্চ মাসে পোস্ট করা হয়, জ্যোতি বলেন, “প্রথমে আমরা ভারতীয় ইমিগ্রেশন পার করি, তারপর অটারি-ওয়াঘা সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করি। সীমান্ত পার হওয়ার মুহূর্ত খুব স্মরণীয়, গায়ে কাঁটা দেয়। পাকিস্তানে প্রবেশ করলেই সংবাদমাধ্যমের নজরে পড়ি।”

তিনি আরও বলেন, “পাকিস্তানে পৌঁছে মুদ্রা বদল করতে হয়। আমি এক ভারতীয় মুদ্রায় ২.৬ পাকিস্তানি মুদ্রা পেয়েছিলাম, যদিও আমি ভেবেছিলাম তিন টাকা পাবো।” তার অন্যান্য ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি লাহোরের রাস্তা ঘুরে দেখছেন, রমজানের খাবার উপভোগ করছেন এবং বিভিন্ন মন্দিরে ভ্রমণ করছেন।

এই মামলায় আরও একজন নিরাপত্তারক্ষী নওমান ইলাহীকে পানিপথ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২৪ বছর বয়সী ইলাহী তার শ্যালকের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা নিয়ে গোপন তথ্য পাকিস্তানে পাঠাতেন বলে অভিযোগ। অপরদিকে, ২৫ বছর বয়সী দেবেন্দ্র সিং ঢিলোঁ, যিনি পতিয়ালার খালসা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র, তাকেও ১২ মে কাইথাল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, তিনি নভেম্বরে কাতারপুর করিডরের মাধ্যমে পাকিস্তানে যান এবং আইএসআই কর্মকর্তাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভাগ করে নেন।

কাইথালের পুলিশ সুপার আস্থা মোদি জানান, অভিযুক্ত ছাত্র পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে পতিয়ালার সামরিক ঘাঁটির ছবি ভাগ করে নিয়েছিলেন। এই ঘটনার পর, পাঞ্জাব পুলিশও একই ধরনের অভিযোগে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে।