জেরুজালেম/গাজা, ১৮ মে: ইজরায়েলি সেনাবাহিনী ‘অপারেশন গিডিওনের চ্যারিয়টস’ নামে গাজায় এক বৃহৎ সামরিক অভিযান শুরু করেছে। সেনাবাহিনীর দাবি, এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য হল গাজায় কৌশলগত এলাকাগুলিকে দখলে নেওয়া, হামাসকে পরাজিত করা এবং জিম্মিদের মুক্ত করা।
ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “গত ২৪ ঘণ্টায় সেনাবাহিনী ১৫০টিরও বেশি সন্ত্রাসবাদী টার্গেটে আঘাত করেছে এবং দক্ষিণ গাজা জুড়ে মোতায়েন হয়েছে। এই অপারেশন গাজা যুদ্ধের লক্ষ্যে পৌঁছনোর প্রথম ধাপ।”
এই ঘটনাগুলির মাঝে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ করলেও গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনও কার্যকর সমাধান আনতে ব্যর্থ হন। যদিও তিনি কাতারে অবস্থানকালে বলেন, “আমার গাজার জন্য কিছু ধারণা আছে। এটিকে ‘ফ্রিডম জোন’ করে তুলতে চাই।”
তিনি আরও বলেন, “অনেক মানুষ ক্ষুধার্ত, আমরা সেটা দেখছি। আমরা এটা সামাল দেব।” তবে ট্রাম্প ইজরায়েল সফর করেননি, যা দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান মতবিরোধের ইঙ্গিত বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানিয়েছে, শুক্রবার ইজরায়েলি হামলায় ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গাজা জুড়ে খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ এবং পরিষ্কার জলের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন NGO ও মানবাধিকার সংগঠন ইজরায়েলের রিলিফ অবরোধ তুলে নিতে আহ্বান জানিয়েছে।
ইজরায়েল অবশ্য দাবি করেছে, এই অবরোধ হামাসকে চাপে রাখার কৌশল, কারণ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলার সময় অপহৃত কয়েক ডজন ইজরায়েলি এখনও হামাসের হাতে বন্দি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু-র কৌশল অনুযায়ী, গাজার মানুষকে দক্ষিণ দিকে সরিয়ে এবং কিছু এলাকা নিজের দখলে রেখে হামাসকে নির্মূল করা হবে। তবে এই পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক মহলে চরম সমালোচনার মুখে পড়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ইজরায়েলের এই অভিযান ও জনসংখ্যাকে স্থায়ীভাবে স্থানচ্যুত করার প্রচেষ্টাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন কূটনীতি এখন ইজরায়েলকে বাইপাস করে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য শক্তির সঙ্গে সরাসরি চুক্তিতে প্রবেশ করছে। হোথিদের সঙ্গে চুক্তিতে তারা রেড সি-তে মার্কিন জাহাজে হামলা না করার প্রতিশ্রুতি আদায় করেছে, যদিও হোথিরা ইজরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে বলেই জানিয়েছে।
অন্যদিকে, হামাস এক ইজরায়েলি-আমেরিকান জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে, যাকে এই কূটনৈতিক চুক্তির অংশ বলেই মনে করা হচ্ছে। ইজরায়েলের অভ্যন্তরেও যুদ্ধ নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে। হাজার হাজার রিজার্ভ বাহিনীর সদস্য যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইজরায়েলি বিমান বাহিনীর প্রাক্তন সেনা ও অবসরপ্রাপ্ত অফিসারদের একটি দল যুদ্ধ থামিয়ে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে।
2025-05-17

