আনন্দময়ী আশ্রমে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত

আগরতলা, ১৬ মে: আনন্দময়ী মায়ের ১৩০ তম আবির্ভাব দিবস উপলক্ষে সমস্ত শাস্ত্রীয় বিধি মেনে আগরতলার আনন্দময়ী আশ্রমে সম্পন্ন হয়েছে কুমারী পূজা।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, একদা বানাসুর নামে এক দুর্ধর্ষ অসুর স্বর্গ, মর্ত, পাতাল দখল করে নিয়েছিল। সেই সময়ে বিপন্ন দেবগণ মহাকালীর স্মরনাপন্ন হয়েছিলেন। দেবগণকে রক্ষা করতে দেবী দুর্গা কুমারীরূপে পুনর্জন্ম নেন। জানা যায়, দেবী ওই কুমারী রূপেই বানাসুরকে বধ করেছিলেন। সেই থেকেই মর্ত্যে এই পুজোর প্রচলন হয়। প্রথাগত ভাবে দুর্গাপুজোর অষ্টমীর দিন শিশুকন্যা বা কুমারী কন্যাকে স্নান করিয়ে মাতৃ মূর্তির মতো করে সাজানো হয়। তারপর দেবী মূর্তির সামনে বসিয়ে সেই কুমারী কন্যার আরাধনা করা হয়। পুজোয় দেবী দুর্গাকে যে ভোগ দেওয়া হয়, সেই ভোগই অর্পণ করা হয় সেই কুমারী কন্যার উদ্দেশ্যেও। এরপর তার পায়ে ফুল দিয়ে প্রণাম করা হয়।

এই পুজোতে জাতি, ধর্ম, বর্ণের কোনও ভেদাভেদ নেই। যে কোনও কুমারীই দেবীজ্ঞানে পূজিতা হয়ে থাকে। দুর্গা তথা কালী, লক্ষ্মী ও সরস্বতী- এই ত্রিদেবীকে তুষ্ট করার অভিপ্রায়ে এই পুজো করা হয়। এছাড়াও বলা হয় বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যে তিনটি শক্তি বিরাজ করছে ওই তিনটি শক্তিই বীজাকারে কুমারীতে নিহিত। তাই কুমারীকে দেবী রূপে পুজো করা হয়। প্রাচীন কালে মুনি ঋষিরা বিশ্বাস করতেন, মানুষের মধ্যেই ঈশ্বরের অযুত প্রভাব রয়েছে। কারণ মানুষ চৈতন্যযুক্ত। আর যাঁদের মন সৎ ও কলুষতামুক্ত, খুব স্বাভাবিকভাবে তাঁদের মধ্যেই ঈশ্বরের প্রকাশ বেশি। শিশু কুমারীদের মধ্যে এই গুণগুলি থাকে বলেই তাদের বেছে নেওয়া হয় এই পুজোর দেবী হিসেবে। এই পুজো কল্যাণ, সুখ সমৃদ্ধি বয়ে আনে।

আজ আনন্দময়ী মায়ের ১৩০ তম আবির্ভাব দিবস উপলক্ষে আনন্দময়ী আশ্রমে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। কুমারী পূজাকে কেন্দ্র করে এদিন সকাল থেকেই মন্দিরে ভক্ত প্রাণ মানুষের উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়। পুরোহিত জানিয়েছেন, প্রতি বছরই এবছর আর্বিভাব দিবসে আনন্দময়ী আশ্রমে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর জয়স্মিতা চক্রবর্তী নামে ৫ বছর বয়সি বালিকাকে কুমারী মা হিসেবে পুজো করা হয়। হাঁপানিয়া এলাকার বাসিন্দা জয়দীপ চক্রবর্তী এবং সুস্মিতা চক্রবর্তীর মেয়ে বেদান্তিক চক্রবর্তী মায়ের আসনে অধিষ্ঠিত করে শ্রদ্ধা ভরে পূজা করা হয়।