তামিলনাড়ু বিল মামলা : বিল অনুমোদনে রাজ্যপালদের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চেয়েছেন রাষ্ট্রপতি

নয়াদিল্লি, ১৫ মে : বিল অনুমোদনের ক্ষেত্রে রাজ্যপালদের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা যায় কি না, কারণ সংবিধানে এ বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারিত নেই। তামিলনাড়ু বিল সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সংবিধানের ১৪৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শীর্ষ আদালতের কাছে মতামত চেয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি জানতে চেয়েছেন, সংবিধানের ২০০ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাজ্যপালের কাছে কোনো বিল উপস্থাপিত হলে, সেই সময় তাঁর হাতে থাকা বিভিন্ন বিকল্প ব্যবহার করার সময় তিনি কি মন্ত্রিপরিষদের পরামর্শ মেনে চলতে বাধ্য?

আরও জানতে চেয়েছেন, বিল অনুমোদনের ক্ষেত্রে রাজ্যপালের সংবিধানিক বিবেচনার ব্যবহার কি বিচারযোগ্য, যেখানে ৩৬১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তাঁর কার্যকলাপ বিচারিক পর্যালোচনার বাইরে?

রাষ্ট্রপতি প্রশ্ন করেছেন, “যখন সংবিধানে সময়সীমা নির্ধারিত নয় এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ব্যবহারের নিয়ম নির্দিষ্ট করা হয়নি, তখন কি আদালতের মাধ্যমে সময়সীমা নির্ধারণ এবং ব্যবহারের রীতি নির্ধারণ করা যেতে পারে, বিশেষ করে ২০১ অনুচ্ছেদের অধীনে রাষ্ট্রপতির বিবেচনার ক্ষেত্রে?”

প্রসঙ্গত, গত এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ—বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং আর. মহাদেবন—সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের ক্ষমতা ব্যবহার করে তামিলনাড়ু সরকার ও রাজ্যপাল আর.এন. রবি-র মধ্যে বিল অনুমোদন নিয়ে চলমান অচলাবস্থা নিরসন করেন।

বেঞ্চ রায় দেয়, রাজ্যপালের ১০টি বিল অনুমোদনে অস্বীকৃতি “অবৈধ ও খেয়ালী” এবং বিধানসভা কর্তৃক পুনরায় গৃহীত বিলগুলির জন্য রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালকে অনুমোদনের জন্য তিন মাসের সময়সীমা নির্ধারণ করেন।

বিচারপতি পারদিওয়ালা বলেন, “রাজ্যপালের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য সংরক্ষিত বিলগুলির বিষয়ে রাষ্ট্রপতির তিন মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া বাধ্যতামূলক।” সময়সীমার মধ্যে সিদ্ধান্ত না হলে, সংশ্লিষ্ট রাজ্য রিট পিটিশন দাখিল করে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে আদেশের রায় চাওয়ার অধিকার রাখে বলে আদালত জানায়।

শীর্ষ আদালত জানায়, একটি বিল যদি ফেরত দেওয়া হয়, পরে বিধানসভা পুনরায় পাস করে এবং আবার রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হয়, তবে রাজ্যপালের পক্ষে সেটিকে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো বৈধ নয়। এছাড়া, রাষ্ট্রপতিকে এখন তাঁদের সিদ্ধান্তের কারণ জানাতে হবে এবং তা সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারকে অবহিত করতে হবে।

আদালত পরামর্শ দেয়, সংবিধান-সংক্রান্ত বিলের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির উচিত সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ গ্রহণ করা। এই রায় রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তকেও বিচার পর্যালোচনার আওতায় নিয়ে এসেছে এবং বিল অনুমোদনের জন্য তিন মাসের সময়সীমাকে সমর্থন করেছে।

এদিকে, এই ইস্যুতে নতুন মোড় দেখা দেয় যখন উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় বিচারব্যবস্থার বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় আক্রমণ শানান এবং সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদকে “গণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে ব্যবহৃত পারমাণবিক অস্ত্র” বলে অভিহিত করেন।