নয়াদিল্লি, ১৫ মে : ভারতের সেনাবাহিনীর অপারেশন ‘সিঁদুর’-এর পর প্রতিরক্ষা ও সামরিক দিক থেকে বিপর্যস্ত পাকিস্তান এবার সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন জানিয়েছে। পাকিস্তানের জল সম্পদ মন্ত্রণালয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে চুক্তির অধীনে নদীর প্রবাহ পুনরায় চালুর অনুরোধ জানিয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।
১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত সিন্ধু জলচুক্তি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অন্যতম দীর্ঘস্থায়ী জলবণ্টন চুক্তি। তবে ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিরীহ নাগরিক নিহত হওয়ার পর ভারতের পক্ষ থেকে জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থে এই চুক্তি স্থগিত রাখা হয়।
ভারতের ক্যাবিনেট সিকিউরিটি কমিটি (CCS) এই সিদ্ধান্তকে অনুমোদন করে—এটাই প্রথমবার, যখন নয়াদিল্লি এই গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিতে ‘বিরতি’ টানল।
চিঠিতে পাকিস্তান ভারতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে লেখেছে, চুক্তি স্থগিত থাকলে দেশের অভ্যন্তরে মারাত্মক জলসংকট তৈরি হবে। পাকিস্তানের দাবি, চুক্তি পুনরায় কার্যকর না হলে “জলবিপর্যয়” অনিবার্য।
তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, “রক্ত ও জল একসাথে প্রবাহিত হতে পারে না।” তিনি আরও বলেন, “সন্ত্রাস ও আলোচনা একসাথে চলতে পারে না। সন্ত্রাস ও বাণিজ্য একসাথে হতে পারে না।”
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “সিন্ধু চুক্তি সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বের ভিত্তিতে গঠিত হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান দশকের পর দশক ধরে সীমান্তপারে সন্ত্রাসবাদে মদত দিয়ে এই মূল্যবোধগুলিকে পদদলিত করেছে।”
চুক্তি অনুযায়ী, তিনটি পশ্চিমী নদী সিন্ধু, ঝিলম ও চেনাব পাকিস্তানকে বরাদ্দ ছিল, আর তিনটি পূর্বী নদী সতলজ, বেয়াস ও রাভি ভারতের জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু এখন ভারত তিন স্তরের কৌশল নিয়েছে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদী। যাতে এক ফোঁটা জলও পাকিস্তানে না পৌঁছায়।
কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী সি.আর. পাতিল জানিয়েছেন, ভারতের ভূখণ্ড থেকে কোনো জল অপচয় না করে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগানোর জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এখন স্থগিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করার দিকে মনোযোগ দেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, জলসম্পদমন্ত্রী পাতিল, বিদ্যুৎমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর, কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের শীর্ষ আধিকারিকদের নিয়ে চলতি সপ্তাহেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যেই অমিত শাহ এবং পাতিলের নেতৃত্বে দুই দফা বৈঠক হয়ে গেছে।
নয়াদিল্লির কূটনৈতিক অবস্থান এখন পরিষ্কার, সন্ত্রাস বন্ধ এবং পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর, ইসলামাবাদের সঙ্গে যেকোনো আলোচনা কেবল এই বিষয়েই সীমাবদ্ধ থাকবে।

