নিজস্ব প্রতিনিধি, তেলিয়ামুড়া, ১৫ মে:
তেলিয়ামুড়ায় বামপন্থী এক প্রভাবশালী নেতার বাড়িতে নিজের পুত্রবধুকে পুড়িয়ে মারার এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় অভিযুক্ত শ্বশুর তপন পাল এবং ননদ জামাই কৃষ্ণ পাল ঘটনার এক পক্ষকাল আত্মগোপন করে থাকার পর অবশেষে গত তিনদিন আগে খোয়াই আদালতে আত্মসমর্পণ করে। পরে তেলিয়ামুড়া থানার পুলিশ বৃহস্পতিবার অভিযুক্তদের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করলে আদালত ধৃতদের তিনদিনের পুলিশি রিমান্ড মঞ্জুর করে।
উল্লেখ্য, স্বামীর পরনারীর প্রতি আসক্ত হওয়ার ঘটনায় প্রতিবাদ জানালে গত ২৬ শে এপ্রিল সন্ধ্যারাতে খুন হয় তেলিয়ামুড়ার শান্তিনগর গ্রামের দীপান্বিতা সরকার পাল (২৩) নামে এক গৃহবধূকে। এমনই অভিযোগ মৃত গৃহবধুর মা বাবার। এই মৃত্যুর ঘটনায় এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য দেখা দিলে , দোষীদের শাস্তির দাবিতে এলাকায় জুড়ালো আওয়াজ উঠতে শুরু করে।
ওইদিনের সংশ্লিষ্ট ঘটনার বিষয়ে তেলিয়ামুড়া মহকুমা হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানায়, ওইদিন সন্ধ্যায় তেলিয়ামুড়া অগ্নি নির্বাপক দপ্তরের কর্মীরা দীপান্বিতা সরকার পাল নামের ২৩ বছর বয়সী এক অগ্নিদগ্ধ গৃহবধূকে তেলিয়ামুড়া মহকুমা হাসপাতালের জরুরীকালীন বিভাগে নিয়ে আসে। সেখানে নিয়ে আসলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক দেখতে পায় হাসপাতালে নিয়ে আসার পূর্বেই গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে। পরে ঘটনার খবর পেয়ে আগরতলা থেকে তড়িঘড়ি তেলিয়ামুড়ায় ছুটে আসে মৃত গৃহবধুর মা বাবা।
এব্যাপারে মৃতার মা বাবা জানায়, প্রায় দেড় বছর পূর্বে আগরতলার বাসিন্দা দীপান্বিতা সরকারের সঙ্গে সামাজিকভাবে বিবাহ হয় তেলিয়ামুড়া শান্তিনগর এলাকার বাসিন্দা তথা প্রাক্তন বামপন্থী পুরপরিষদের কাউন্সিলর তপন পালের ছেলে তন্ময় পালের। বর্তমানে তাদের দশ মাসের একটি শিশু সন্তানও রয়েছে। বিয়ের পর সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও বিগত কয়েক মাস ধরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে স্বামীর পরনারীতে আসক্ত হওয়ার ঘটনায় ঝামেলা চলছিল।
এই সূত্র ধরে তন্ময় পালের স্ত্রী অভিমান করে ঘটনার সাতদিন আগে বাপের বাড়িতে চলে যায়। পরে সাতদিন অতিবাহিত হলে স্বামী তন্ময় পাল তার স্ত্রীকে বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে আসে। আর এদিনই সন্ধা রাতেই গৃহবধুর অগ্নিদগ্ধ হওয়ার এই ঘটনাটি ঘটেছে। এই মৃত্যুর ঘটনায় মৃত গৃহবধুর বাবা জানান ওইদিন শনিবার সন্ধ্যায় তার মেয়ে ফোন করে জানায় যে, তার শশুর এবং স্বামী এবং ননদ জামাই তাকে দরজা বন্ধ করে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। মেয়ের এই শেষ ফোন করার কুড়ি মিনিট পর শশুর তপন পাল গৃহবধুর বাবাকে ফোন করে জানায় যে তার মেয়ে নাকি গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে তাই তাড়াতাড়ি যেন তারা এসে দেখে যায়।
মৃতার পরিবারের অভিযোগ তার মেয়েকে গলা টিপে হত্যা করে পরে অগ্নিদগ্ধ করে গৃহবধূকে প্রাণে মেরে ফেলা হয়েছে। এব্যাপারে মৃত গৃহবধুর পরিবার থেকে স্বামী তন্ময় পাল, শ্বশুর তপন পাল, ননদ মন্টি পাল এবং ননদ জামাই কৃষ্ণ পাল এই চারজনের নামে থানায় অভিযোগ করে। পুলিশ অভিযোগ পেয়ে একটি বধুহত্যার মামলা নথিভুক্ত করে। যার কেইস নাম্বার হলো টিএলএম পিএস ০৩৮ ইউ/এস ৮৫/৮০(২)/৪৯ অফ বিএনএস ২০২৩। মামলা নিয়ে পুলিশ স্বামী তন্ময় পালকে গ্রেপ্তার করে এবং পুলিশ রিমান্ডে এনে জোর জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যায়।এবং বাকি অভিযুক্তদের তদন্তের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে পুলিশ জানায়।
এদিকে পুলিশ এই মামলার তদন্তের স্বার্থে এক ফরেনসিক টিমকে নিয়ে এসে ঘটনার তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে মৃত গৃহবধুর মা এলাকার বিধায়িকা কল্যাণী সাহা রায়কে কাছে পেয়ে অভিযুক্তের কঠোর শাস্তি যাতে হয় সে বিষয়ে দৃষ্টিপাত করতে আবেদন জানান। এব্যাপারে বিধায়িকা মৃতার মা বাবাকে আশ্বস্ত করেন যে, পুলিশ পুলিশের কাজ সঠিকভাবেই করছে।তদন্তে কোনো নির্দোষ ব্যক্তিকে যাতে শাস্তি দেওয়া না হয়, আবার দোষী পাওয়া গেলে তার থেকে কাউকেই রেহাই দেওয়া হবে না বলে আশ্বস্ত করেছিল। বর্তমানে শ্বশুর তপন পাল এবং ননদ জামাই কৃষ্ণ পাল গ্রেপ্তার হওয়ায় তদন্তে নয়া মোড় আসতে পারে বলে পুলিশ অনুমান করছে।
————

