ব্রিটেনে অভিবাসন নীতিতে কড়াকড়ি, ইংরেজি ভাষাজ্ঞানের শর্ত আরও কঠোর করল স্টারমার সরকার

লন্ডন, ১৩ মে : ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার ঘোষণা করেছেন, দেশটির নতুন অভিবাসন সংস্কারের অংশ হিসেবে ইংরেজি ভাষাজ্ঞানের ওপর আরও কঠোর শর্ত আরোপ করা হবে। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য দ্বিগুণ সময়সীমা, এবং পরিবারের মাধ্যমে অভিবাসনের ক্ষেত্রে আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা। স্টারমারের কথায়, “আপনি যদি ব্রিটেনে বাস করতে চান, তাহলে ইংরেজি বলতে জানতে হবে। এটা সাধারণ বোধ।” এই মন্তব্যটি তিনি তাঁর অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছেন।

অভিবাসন নীতিতে নতুন অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, প্রাপ্তবয়স্ক নির্ভরশীলদের জন্য ইংরেজি ভাষা জানার শর্ত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। স্কিল্ড ওয়ার্কার ভিসা পেতে হলে এখন থেকে প্রার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রিধারী হতে হবে। ভিসা নবায়ন এবং স্থায়ী বাসস্থান/নাগরিকত্বের আবেদন— উভয় ক্ষেত্রেই বাড়তি ইংরেজি ভাষাজ্ঞানের প্রমাণ দিতে হবে। নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বসবাসের যোগ্যতা অর্জনের সময়সীমা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করা হয়েছে। সামাজিক সেবার কাজের জন্য (যেমন—প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী পরিচর্যা) বিদেশি নিয়োগ বন্ধ করা হবে। পরিবারভিত্তিক অভিবাসনের ক্ষেত্রে প্রবাসীদের আর্থিক সহায়তার সক্ষমতা প্রমাণ করতে হবে।

এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এসেছে যখন ব্রিটেনে অভিবাসন ইস্যু ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ তুঙ্গে। কট্টরপন্থী অভিবাসন বিরোধী রিফর্ম পার্টির সমর্থন ক্রমাগত বাড়ছে, যা স্টারমারের লেবার পার্টির ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। ২০২৩ অর্থবছরে ব্রিটেনে ৯ লাখ ৬ হাজার অভিবাসী প্রবেশ করেছেন, যা ছিল রেকর্ড পরিমাণ। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা কিছুটা কমে ৭ লাখ ২৮ হাজারে দাঁড়িয়েছে। স্টারমার সরকারের কড়া অবস্থানকে অনেকে লেবার পার্টির ঐতিহ্যবাহী ‘সহনশীল অভিবাসন নীতির’ বিপরীত বলে মনে করছেন।

ব্রিটেনের সংসদ সদস্য জারাহ সুলতানা এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলেন, স্টারমারের বক্তব্য ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ এনক পাওয়েলের ভাষণের প্রতিধ্বনি, যা অভিবাসন বিরোধী মনোভাবের প্রতীক হয়ে আছে ব্রিটেনের ইতিহাসে। তবে প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের সাফ কথা, “আমরা আমাদের সীমান্তের উপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাবো।”

এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্লেষকদের বক্তব্য, স্টারমারের এই কড়া অবস্থান মূলত অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপের ফল। রিফর্ম পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজ বারবার অভিবাসনের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছেন, এমনকি “অপ্রয়োজনীয় অভিবাসনে স্থগিতাদেশ” দাবি করেছেন। সেই প্রেক্ষাপটেই স্টারমার সরকার এই কঠোর সংস্কার পেশ করল বলে মনে করা হচ্ছে।

এই পরিবর্তনের ফলে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য যুক্তরাজ্যে প্রবেশ ও স্থায়ী হওয়ার পথ অনেকটাই কঠিন হয়ে পড়বে, বিশেষ করে যারা পরিবারের মাধ্যমে অভিবাসন করেন বা সামাজিক সেবার পেশায় যুক্ত রয়েছেন। এই সংস্কারের বাস্তবায়ন ও তার প্রভাব এখন গোটা ব্রিটেনেই আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে।