ভারতের মহাকাশ দর্শন ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’-এর চেতনায় নিহিত: গ্লোবাল স্পেস এক্সপ্লোরেশন সামিটে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভাষণ

নয়াদিল্লি, ৭ মে : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে গ্লোবাল স্পেস এক্সপ্লোরেশন সামিট ২০২৫-এ ভাষণ দেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বিজ্ঞানী, মহাকাশচারী এবং প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি ভারতের মহাকাশ অভিযানের বিস্ময়কর অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিস্তারিত বিবরণ দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মহাকাশ কেবল এক গন্তব্য নয়, এটি কৌতূহল, সাহস এবং সম্মিলিত অগ্রগতির এক প্রতীক।” তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৬৩ সালে একটি ক্ষুদ্র রকেট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে আজ ভারত চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণকারী প্রথম দেশ হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।

তিনি বলেন, “ভারতের রকেট শুধু পেলোড নয়, তারা ১.৪ বিলিয়ন ভারতীয়ের স্বপ্ন বহন করে।” ২০১৪ সালে ভারতের প্রথম প্রচেষ্টায় মঙ্গলে পৌঁছনোর ঐতিহাসিক সাফল্য, চন্দ্রযান-১ এর চাঁদে জলের সন্ধান, চন্দ্রযান-২ এর উচ্চ রেজোলিউশনের চিত্র এবং চন্দ্রযান-৩ এর দক্ষিণ মেরু সম্পর্কিত গবেষণার কথা তুলে ধরেন তিনি।

তিনি জানান, ভারত দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিন তৈরি করেছে, এক মিশনে ১০০ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে এবং ৩৪টি দেশের ৪০০টির বেশি স্যাটেলাইট সফলভাবে লঞ্চ করেছে। সম্প্রতি, ভারত মহাকাশে দুটি উপগ্রহ ডক করে এক নতুন মাইলফলক অর্জন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভারতের মহাকাশ যাত্রা প্রতিযোগিতার জন্য নয়, বরং সহযোগিতার মাধ্যমে উচ্চতর লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য।” তিনি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির জন্য স্যাটেলাইট লঞ্চ এবং G20 স্যাটেলাইট মিশনের মাধ্যমে গ্লোবাল সাউথে ভারতের অবদানের কথা তুলে ধরেন।

ভারতের প্রথম মানব মহাকাশ মিশন ‘গগনযান’-এর কথা উল্লেখ করে মোদী জানান, আসন্ন সপ্তাহে একজন ভারতীয় মহাকাশচারী ইসরো- নাসা যৌথ মিশনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে যাত্রা করবেন। প্রধানমন্ত্রী ২০৩৫ সালের মধ্যে একটি ভারতীয় স্পেস স্টেশন স্থাপন এবং ২০৪০ সালের মধ্যে একজন ভারতীয় নাগরিকের চাঁদের মাটিতে পদচিহ্ন রাখার পরিকল্পনাও ঘোষণা করেন। পাশাপাশি, মঙ্গল ও শুক্রও ভারতের ভবিষ্যৎ গবেষণার রাডারে রয়েছে বলে জানান তিনি।

মোদী বলেন, “মহাকাশ ভারতের জন্য অনুসন্ধানের পাশাপাশি ক্ষমতায়নের প্রতীক।” তিনি বলেন, উপগ্রহ প্রযুক্তির মাধ্যমে আজ ভারতীয় মৎস্যজীবীদের সতর্কতা, রেল নিরাপত্তা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং গতিশক্তি প্ল্যাটফর্মের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।

তিনি জানান, ভারত তার মহাকাশ ক্ষেত্র স্টার্টআপ, উদ্যোগপতি ও যুব প্রতিভার জন্য উন্মুক্ত করেছে। বর্তমানে ভারতের ২৫০টিরও বেশি স্টার্টআপ উপগ্রহ প্রযুক্তি, ইমেজিং ও প্রপালশন সিস্টেমে বিশ্বমানের উদ্ভাবনে নিয়োজিত। তিনি গর্বের সঙ্গে বলেন, বহু মহাকাশ মিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভারতীয় নারী বিজ্ঞানীরা।

সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভারতের মহাকাশ দর্শন প্রাচীন ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ দর্শনে নিহিত, যার অর্থ ‘বিশ্ব একটি পরিবার’। আমরা কেবল নিজেদের উন্নয়নের জন্য নয়, বরং বৈশ্বিক জ্ঞানে অবদান রাখা, সাধারণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করার জন্যও কাজ করি।”