নির্বাচনী পরিষেবার জন্য একক প্ল্যাটফর্ম: শীঘ্রই আসছে ইসিআইনেট, ঘোষণা নির্বাচন কমিশনের

নয়াদিল্লি, ৪ মে: ভারতের নির্বাচন কমিশন রবিবার এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছ। দেশের সমস্ত নির্বাচন-সম্পর্কিত পরিষেবা একত্রিত করতে খুব শীঘ্রই চালু হতে চলেছে ইসিআইনেট নামক একটি সর্বসমন্বিত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্মটির লক্ষ্য হবে ৪০টিরও বেশি বর্তমান মোবাইল ও ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনকে একটি সহজ, আধুনিক ও ব্যবহারকারী-বান্ধব ইন্টারফেসে একত্রিত করা। ভোটার, নির্বাচন কর্মী, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজ—সব পক্ষের জন্যই এই প্ল্যাটফর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

এক সরকারি বিবৃতিতে কমিশন জানিয়েছে, “একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ হিসেবে নির্বাচন কমিশন ইসিআইনেট নামক একটি নতুন ব্যবহারকারী-বান্ধব ডিজিটাল ইন্টারফেস তৈরি করছে, যা নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরও সহজ ও কার্যকর করে তুলবে।” ডেস্কটপ এবং মোবাইল—উভয় ডিভাইসে সহজে ব্যবহারযোগ্য এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আর আলাদা আলাদা অ্যাপ ব্যবহারের প্রয়োজন পড়বে না। ব্যবহারকারীদের একবার লগইনেই মিলবে সব পরিষেবা ও তথ্য।

২০২৫ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকদের সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের পরামর্শে ইসিআইনেট-এর ধারণা তৈরি হয়েছিল। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার সুখবীর সিং সন্দু এবং বিবেক জোশী।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, নতুন প্ল্যাটফর্মে ভোটার হেল্পলাইন অ্যাপ, ভোটার টার্নআউট অ্যাপ, সিভিজিল, সুবিধা 2.0, ইএসএমএস, সক্ষম, এবং কেওয়াইসি অ্যাপ-এর মতো জনপ্রিয় অ্যাপ একত্রিত হবে। এই অ্যাপগুলির সম্মিলিত ডাউনলোড সংখ্যা ইতিমধ্যেই ৫.৫ কোটির বেশি।

কমিশনের লক্ষ্য, প্রায় ১০০ কোটি ভোটার, ১০.৫ লক্ষ বুথ স্তরের কর্মী, ১৫ লক্ষ রাজনৈতিক দলের এজেন্ট, ৪৫ লক্ষ ভোটগ্রহণ কর্মী, ১৫,৫৯৭ সহকারী ভোটার নিবন্ধন আধিকারিক , ৪,১২৩ ভোটার নিবন্ধন আধিকারিক এবং ৭৬৭ জেলা নির্বাচন আধিকারিক-এর জন্য কাজের গতি ও সুবিধা বহুগুণে বাড়ানো।

ইসিআইনেট শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশনের অনুমোদিত আধিকারিকদের তথ্য আপলোড করার অনুমতি দেবে, যাতে তথ্যের নির্ভুলতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বজায় থাকে। কোনও রকম বিভ্রান্তির ক্ষেত্রে আইনি ফর্মে থাকা মূল তথ্যকেই গ্রহণযোগ্য বলে ধরা হবে। এই প্ল্যাটফর্মটি ১৯৫০ ও ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৬০ সালের ভোটার রেজিস্ট্রেশন বিধি এবং ১৯৬১ সালের নির্বাচন পরিচালনা বিধি-সহ নির্বাচন কমিশনের যাবতীয় নির্দেশাবলীর সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকবে।

বর্তমানে ইসিআইনেট কার্যকরের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং এর কার্যকারিতা, ব্যবহারযোগ্যতা ও সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিস্তৃত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় দেশের ৩৬টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক, ৭৬৭ জন জেলা নির্বাচনী আধিকারিক ও ৪,১২৩ জন ইআরও-র সঙ্গে পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কমিশনের প্রকাশিত ৯,০০০ পাতার ৭৬টি নির্দেশিকা ও হ্যান্ডবুক বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

চূড়ান্ত রূপে চালু হলে, ইসিআইনেট ভারতের ডিজিটাল গভর্ন্যান্সের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং সাধারণ ভোটার থেকে শুরু করে নির্বাচনী কর্মীদের জন্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অনেক সহজতর করে তুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।