আগরতলা, ৪ মে : সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ত্রিপুরায় ৭০ জন গ্রাহক ৩০ হাজার ৯০২ টাকা উপার্জন করেছেন। পিএম সূর্য ঘর যোজনার সুফল এভাবেই তুলে ধরেছেন বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ। আজ সচিবালয়ে নিজ অফিস কক্ষে সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর দাবি, ওই যোজনায় ভর্তুকিতে সোলার প্ল্যান্ট বসিয়ে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা উপকৃত হচ্ছেন। তাতে, তাঁদের বিদ্যুৎ ব্যবহারে খরচ যেমন কমছে, তেমনি বিদ্যুৎ বিক্রি করে উপার্জনও হচ্ছে। এর সুফল স্বয়ং বিদ্যুৎ মন্ত্রী নিজেও পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
এদিন তিনি বলেন, মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বিদ্যুৎ অপরিহার্য, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কারণ, আধুনিক পৃথিবী এবং মানুষের জীবন বিদ্যুৎ ছাড়া সম্ভব নয়। এই উপলব্ধি থেকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিদ্যুৎকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। রতন লাল নাথের বক্তব্য, জল, বায়ু, কয়লা, গ্যাস এবং সৌর শক্তি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। ত্রিপুরায় বিশেষ করে গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু, গ্যাসের মজুদ ক্রমশ কমছে। ফলে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভবিষ্যৎ চিন্তা থেকে সৌর বিদ্যুতে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।
বিদ্যুৎ মন্ত্রীর কথায়, ত্রিপুরায় পালাটানায় ৭২৬ মেগা ওয়াটের বদলে ৫২০ মেগা ওয়াট, মনারচকে ১০১ মেগা ওয়াটের বদলে ৬০ মেগা ওয়াট এবং আর সি নগরে ১৩৫ মেগা ওয়াটের বদলে ৮০ মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ উত্পাদিত হচ্ছে। কারণ, প্রয়োজনীয় গ্যাসের অভাব দেখা দিয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ত্রিপুরায় জল বিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উত্পাদনের সম্ভাবনা নেই। কারণ, গত বছর বন্যায় গোমতী জল বিদ্যুৎ প্রকল্প মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে, সৌর বিদ্যুত উত্পাদনের মাধ্যমে ঘাটতি মেটানো প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।
বিদ্যুৎ মন্ত্রী বলেন, পিএম সূর্য ঘর যোজনার মাধ্যমে সৌর বিদ্যুৎ উত্পাদনে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, ইতিমধ্যে ওই যোজনায় সোলার প্ল্যান্ট বসিয়ে বিদ্যুতের খরচ শূন্যে নামিয়ে আনার পাশাপাশি ৭০ জন গ্রাহক ৩০ হাজার ৯০২ টাকা উপার্জন করেছেন। তাঁর দাবি, ওই যোজনায় সোলার প্ল্যান্ট বসাতে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। ২০২৭ সালের মার্চ পর্যন্ত ওই ভর্তুকি প্রদান চালু থাকবে।
তাঁর কথায়, বাড়ির ছাদে কিংবা খোলা জায়গায় ওই সোলার প্ল্যান্ট সহজেই বসানো যাবে। ১ কিলো ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন সোলার প্ল্যান্ট বসাতে এক জন গ্রাহকের ৬৫ থেকে ৭৫ হাজার টাকা খরচ হবে। তাতে, তিনি ৩৩ হাজার ভর্তুকি পাবেন। তেমনি, ২ কিলো ওয়াটে খরচ ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা, ভর্তুকি পাবেন ৬৬ হাজার টাকা। ৩ কিলো ওয়াটে খরচ ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা থেকে ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা এবং ভর্তুকি পাবেন ৮৫ হাজার ৮০০ টাকা।
তিনি জানান, ১ মে পর্যন্ত ১৩৫৩৬ জন ওই যোজনায় সোলার প্ল্যান্ট বসানোর আবেদন জানিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২৬৬ জনের বাড়িতে ইতিমধ্যে সোলার প্ল্যান্ট বসানো হয়ে গেছে। আরও ৬০ জনের বাড়িতেও সোলার প্ল্যান্ট বসানোর কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু, পোর্টালে তাঁদেরকে এখনও আপডেট করা হয়নি। এদিকে, ১৮৪ জন ইতিমধ্যে ভর্তুকির টাকা পেয়ে গেছেন। বাকিদেরও আবেদনের ভিত্তিতে ভর্তুকির টাকা মিটিয়ে দেওয়া হবে, বলেন তিনি।
বিদ্যুৎ মন্ত্রী জানান, যাঁদের সোলার প্ল্যান্ট বসানোর জন্য আর্থিক অবস্থা নেই, তাঁদেরকে ব্যাঙ্ক ঋণ দিচ্ছে। এমন ৯৫ জন গ্রাহক ১৬ লক্ষ ৬৭ হাজার ৭৫০ টাকা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পেয়েছেন। তাঁর দাবি, ২০২৭ সালের মার্চের মধ্যে পিম সূর্য ঘর যোজনায় ৫০ হাজার গ্রাহককে যুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। ওই লক্ষ্যে পৌছুতে সক্ষম হলে ত্রিপুরায় গ্রাহকদের সোলার প্ল্যান্ট থেকেই ১৫০ মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে রাজ্যে। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিক্রি করে গ্রাহকরা আর্থিকভাবে উপকৃত হবেন।
তিনি জানান, বিদ্যুৎ নিগম গ্রাহকদের সোলার প্ল্যান্ট থেকে উত্পাদিত বিদ্যুত ২ টাকা ৬৫ পয়সা প্রতি ইউনিট দরে ক্রয় করছে। সাথে তিনি যোগ করেন, ত্রিপুরায় সমস্ত সরকারি কার্যালয়ে সোলার প্ল্যান্ট বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

