চিকিৎসকদের বাধ্যতামূলকভাবে জেনেরিক ওষুধ প্রেসক্রাইব করতে হবে : সুপ্রিম কোর্ট

নয়াদিল্লি, ২ মে : চিকিৎসকদের বাধ্যতামূলকভাবে শুধু জেনেরিক ওষুধ প্রেসক্রাইব করতে হবে — বৃহস্পতিবার এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ করল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে বিচারপতিরা বলেন, ওষুধ কোম্পানির অনৈতিক বিপণন রোধে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি।

বিচারপতি বিক্রম নাথ, বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ এ দিন মন্তব্য করেন, *“আমাদের মতে, চিকিৎসকদের শুধুমাত্র জেনেরিক ওষুধ প্রেসক্রাইব করাই বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। এটা মামলাকারীদের আবেদনের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।”*

বিচারপতি সন্দীপ মেহতা জানান, “রেজিস্টার্ড চিকিৎসকরা কোনো কোম্পানির নাম উল্লেখ করে প্রেসক্রিপশন দিতে পারেন না — রাজস্থানে ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে নির্বাহী নির্দেশ জারি হয়েছে। যদি এই নির্দেশ দেশব্যাপী কার্যকর করা হয়, তবে তা এক বিশাল পরিবর্তন আনবে।”

জনস্বার্থ মামলাটি দায়ের করেছে ফেডারেশন অফ মেডিকেল অ্যান্ড সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভস অ্যাসোসিয়েশনস অফ ইন্ডিয়া এবং অন্যান্যরা। পিটিশনে দাবি করা হয়েছে, ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি চিকিৎসকদের প্রভাবিত করতে বিপুল অর্থ ব্যয় করছে, যার ফলে বাড়ছে ওষুধের অতিরিক্ত প্রেসক্রিপশন এবং নাগরিকদের জীবনের অধিকার ও স্বাস্থ্য অধিকারে হস্তক্ষেপ ঘটছে।

সিনিয়র আইনজীবী সঞ্জয় পারিখ বলেন, “ওষুধ কোম্পানিগুলির বিরুদ্ধে কার্যত কোনও বাধ্যতামূলক আইন নেই — তাদের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবী কোড ছাড়া কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নেই। অথচ চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে আইন বিদ্যমান।” তবে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিল ইতিমধ্যেই চিকিৎসকদের জেনেরিক ওষুধ প্রেসক্রিপশনের নির্দেশ দিয়েছে। তবে উল্টো দিকে, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন তাদের ২০২৩ সালের প্রফেশনাল কনডাক্ট রেগুলেশনস আপাতত স্থগিত রেখেছে, যেখানে চিকিৎসকদের শুধুমাত্র জেনেরিক ওষুধ লিখতে বলা হয়েছিল।

পিটিশনে অভিযোগ করা হয়েছে, ঔষধ বিপণন অনুশীলনের অভিন্ন কোড কেবল একটি স্বেচ্ছাবিধি এবং এর কোনো আইনি বৈধতা নেই। ফলে ওষুধ কোম্পানিগুলি অনায়াসে চিকিৎসকদের উপহার, অর্থ, ভ্রমণ সুবিধা ইত্যাদি দিয়ে প্রভাবিত করতে পারছে।

কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, ঔষধ বিপণন অনুশীলনের অভিন্ন কোড বর্তমানে স্বেচ্ছায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। তবে সংসদের স্থায়ী কমিটির ৪৫তম প্রতিবেদন বিবেচনাধীন, যেখানে এই কোডকে আইনি রূপ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ডোলো-৬৫০ ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার বিরুদ্ধে প্রায় ১,০০০ কোটি টাকার ‘ফ্রি গিফট’ বিতরণের অভিযোগ এনেছে সিবিডিটি। এই বিষয়টিও মামলায় উত্থাপিত হয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ মামলা ফের শুনানির জন্য জুলাই মাসে ওঠানো হবে বলে আদালত জানিয়েছে।