আগরতলা, ২৭ মার্চ: উত্তর ত্রিপুরা জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের তৎপরতা ফের একবার প্রমাণিত হলো। অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার জেরিমিয়া ডার্লং-এর নেতৃত্বে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ বার্মিজ সিগারেট। যার বাজারমূল্য কয়েক লক্ষাধিক টাকা।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গতকাল রাত আনুমানিক সাড়ে এগারোটার দিকে একটি ইকো গাড়ি (নম্বর TR05 G 0363) দ্রুতগতিতে কৈলাশহরের দিকে যাচ্ছিল। জেলা মোবাইল পেট্রোলিং টিমের নজরে আসে সন্দেহজনকভাবে ছুটে চলা গাড়িটি। অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার জেরিমিয়া ডার্লং গাড়িটিকে থামার সংকেত দেন। কিন্তু সংকেত উপেক্ষা করে গাড়িটি আরও বেপরোয়া গতিতে পালানোর চেষ্টা করে এবং যুবরাজনগর বিধানসভার অন্তর্গত রাজনগর গ্রামের গোশালার দিকে দ্রুতগতিতে ছুটে যায়। শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি একটি বাঁশঝাড়ে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায়। গাড়ির চালক তখনই পালিয়ে যায়। পুলিশ তৎক্ষণাৎ ধর্মনগর থানাকে খবর দিলে বিশাল পুলিশ বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। উপস্থিত ছিলেন পুলিশ আধিকারিক সোলেমান রিয়াং, বিশ্বজিৎ সাহা, বিশ্বাস সাহা-সহ আরও অনেকে। পুলিশ সদস্যরা রাতভর অভিযান চালিয়ে দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটি উদ্ধার করে এবং সেখানে বিপুল পরিমাণে বার্মিজ সিগারেট দেখতে পান। অবশেষে গাড়িটিকে থানায় নিয়ে আসা হয়।
তদন্তে জানা যায়, গাড়ির মালিকের নাম পুলেন্দ্র রিয়াং। একই সময়, অপর একটি ছোট গাড়ি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। গাড়ি থেকে নেমে আসা দুই যুবক কিছু সন্দেহজনক কাজ করার চেষ্টা করলে স্থানীয় জনগণ তাদের আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ধারণা করা হচ্ছে, এই দুই যুবকও বার্মিজ সিগারেট পাচারের সঙ্গে যুক্ত। আটককৃতদের মধ্যে একজন দামছড়ার মনিন্দ্র রিয়াং, অপরজন আসামের বারুইগ্রামের নূর আলম।
পুলিশ আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে এবং পাচার চক্রের সঙ্গে তাদের সংযোগ তদন্ত করছে। তবে এখানেই রহস্যের শেষ নয়। স্থানীয় সাংবাদিকরা যখন ঘটনার ভিডিও ও ছবি তুলতে যান, তখন তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এমনকি নূর আলম পুলিশের উপস্থিতিতেই সাংবাদিকদের ক্যামেরায় হাত দিয়ে বাধা সৃষ্টি করে।
এছাড়া, পুলিশের পক্ষ থেকে সাব ইন্সপেক্টর সুলেমান রিয়াং (যিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন ) প্রথমে জানান গাড়িতে ১১টি সিগারেটের কার্টুন পাওয়া গেছে। কিন্তু পরে সাংবাদিকদের তৎপরতায় দেখা যায়, মোট ৪০টির বেশি সিগারেটের কার্টুন উদ্ধার হয়েছে, যা পুলিশের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ এবং সিগারেট ভর্তি কার্টুন সরানোর চেষ্টা চলছিল।
এই ঘটনায় উত্তর ত্রিপুরা পুলিশের ভূমিকা যেমন প্রশংসনীয়, তেমনি কিছু প্রশ্নও থেকে যাচ্ছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত সমস্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।