নিজস্ব প্রতিনিধি, ধর্মনগর, ২ মার্চ:
এক অনবদ্য আয়োজন ধর্মনগর পৌর পরিষদের উদ্যোগে এবং রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেনের অনুপ্রেরণায় ২০২৩ সাল থেকে শুরু হয়েছিল “খেলো ধর্মনগর”—এক বহুমাত্রিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, যা এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো।
ধর্মনগর মহকুমার বিভিন্ন বিদ্যালয়, ডিগ্রি কলেজ, সামাজিক সংস্থা ও ক্লাবের সক্রিয় অংশগ্রহণে এবারের আসর আরও বৃহৎ ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল।এই বছরের “খেলো ধর্মনগর” প্রতিযোগিতায় ৪৩টি ভিন্ন ভিন্ন খেলাধুলার ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। পাঁচ হাজারেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী, সামাজিক সংস্থার সদস্য, ক্লাবের খেলোয়াড়, গৃহিণী এবং সাধারণ নাগরিকরা এতে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিযোগিতার মূল লক্ষ্য ছিল—যুবসমাজকে মোবাইল আসক্তি ও অন্যান্য অনাকাঙ্ক্ষিত প্রবণতা থেকে দূরে রেখে ক্রীড়াচর্চার প্রতি আকৃষ্ট করা এবং শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বৃদ্ধি করা।সমাপ্তি অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে, আজ সকালে ধর্মনগর অর্ধেন্দু ভট্টাচার্য স্মৃতিভবনের সামনে থেকে ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিযোগীরা এতে অংশগ্রহণ করেন, যা দর্শকদের মন মাতিয়ে তোলে।
এরপর, সকাল ১১টায় ধর্মনগর বিবেকানন্দ সার্ধশতবার্ষিকী ভবনে অনুষ্ঠিত হয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ধর্মনগর পৌর পরিষদের চেয়ারপারসন মিতালী দাস সেন, পৌর পরিষদের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার তথা ধর্মনগর মহকুমা শাসক সজল দেবনাথ, ধর্মনগর বিধায়ক ও রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন, পৌর পরিষদের সমস্ত কাউন্সিলর বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ক্লাব ও সংস্থাগুলির প্রতিনিধিরা, অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড় ও ক্রীড়াপ্রেমীরা |অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিশ্ববন্ধু সেন, যিনি এই উদ্যোগকে সফল করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি বিধায়ক তহবিল থেকে নয় লক্ষ টাকা অনুদান দেন, যা খেলোয়াড়দের পুরস্কার ও প্রাইজমানির জন্য ব্যবহৃত হয়।বিশেষভাবে, ধর্মনগরের কৃতী খেলোয়াড় সপ্তপর্ণা ভট্টাচার্যকে সম্মানিত করা হয়। তিনি সারা ভারতবর্ষের মধ্যে মার্শাল আর্টে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন। বিশ্ববন্ধু সেন তাঁর হাতে পাঁচ হাজার টাকার চেক ও একটি মেমেন্টো তুলে দেন, যা মুহূর্তটিকে আরও স্মরণীয় করে তোলে।
এরপর একে একে প্রতিটি বিভাগে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদের হাতে অর্থ পুরস্কার ও সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়।খেলো ধর্মনগর” শুধুমাত্র একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা নয়, এটি একটি সামাজিক আন্দোলন। বর্তমান প্রজন্মকে মোবাইল ও বিভিন্ন আসক্তি থেকে দূরে রেখে সুস্থ ও সক্রিয় জীবনধারার দিকে ফিরিয়ে আনাই এর মূল উদ্দেশ্য। দেড় মাসব্যাপী প্রতিযোগিতাটি ধর্মনগরের প্রাণকেন্দ্রে বীর বিক্রম ইনস্টিটিউশনের ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রতিদিন প্রচুর দর্শক উপস্থিত হয়ে খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করেছেন।বিশেষভাবে দাবা প্রতিযোগিতাটি ছিল সর্বত্র থেকে প্রতিযোগীদের আকৃষ্ট করার মতো একটি ব্যতিক্রমী আয়োজন। এতে শুধুমাত্র ধর্মনগর নয়, সমগ্র ত্রিপুরা থেকেও খেলোয়াড়রা অংশগ্রহণ করেন।বিশ্ববন্ধু সেন আশ্বাস দিয়েছেন যে, আগামী দিনে এই প্রতিযোগিতাকে আরও বড় পরিসরে আয়োজন করা হবে। তিনি আরও জানান, ধর্মনগরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রয়াত শিল্পীদের প্রতিকৃতি বিবেকানন্দ সার্ধশতবার্ষিকী ভবনের দেওয়ালে স্থাপন করা হবে।এমন এক সুন্দর ও সার্থক আয়োজনের মাধ্যমে ধর্মনগর আবারও প্রমাণ করলো যে, ক্রীড়া শুধু প্রতিযোগিতার জন্য নয়, এটি সামাজিক উন্নয়ন ও ঐক্যের এক সেতুবন্ধন। আগামী দিনে “খেলো ধর্মনগর” আরও বৃহৎ পরিসরে আয়োজনের প্রত্যাশায় রইল গোটা ধর্মনগরবাসী।