রাজ্যে কর ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করতে অগ্রাধিকার দিয়েছে বর্তমান সরকার, আগামী মাসেই বিধানসভায় পেশ করা হবে বাজেট : মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ২২ ফেব্রুয়ারি: রাজ্যে কর ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করতে অগ্রাধিকার দিয়েছে বর্তমান সরকার। কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা ঠেকাতে জনগণকে আরো সচেতন করতে হবে। আর রাজস্ব আয়ের উপর রাজ্যের বাজেট নির্ভর করে। তাই রাজ্যের নিজস্ব রাজস্ব বৃদ্ধি করতে ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামী মাসেই বিধানসভায় পেশ করা হবে রাজ্যের বাজেট। শনিবার আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে জিএসটি সচেতনতা অভিযানে অংশগ্রহণ করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, গত বছর বিধানসভায় প্রায় ২৭,৮০০ কোটি টাকার মতো বাজেট পেশ হয়েছিল। এই আর্থিক পরিমাণের মধ্যে রাজস্ব ক্ষেত্রে আয় ছিল ৩,৭০০ কোটি টাকা। পূর্ববর্তী সরকার যে ১৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল সেই টাকাও আমাদের পরিশোধ করতে হচ্ছে। বেতন, ঋণ পরিশোধ, পেনশন দেওয়ার পরে ২৭,৮০০ কোটির মধ্যে মাত্র ১০,০০০ কোটি টাকার মতো থাকে। আমাদের নিজস্ব আয় যেটা রাজস্ব বা অন্যান্য ক্ষেত্র থেকে আসে সেটা ৩,৭০০ কোটি টাকা। আর এই ৩,৭০০ কোটি টাকার মধ্যে ২৫% এডিসিকে দিতে হয়। এছাড়া ১০% আরবান ও লোক্যাল সংস্থাগুলিকে দিতে হয়। আর আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক থেকে যে অর্থ পাই তার থেকে গতবছর ৩৯% এডিসিকে দিয়েছি। কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে মিলিয়ে বাজেট তৈরি করা হয়। আগের চাইতে আমাদের নিজস্ব রাজস্ব খাতের পরিমাণ অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর উপরই আমাদের মূল ভিত্তি।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০৪৭ এর মধ্যে বিকশিত ভারত এর কথা বলছেন। সমস্ত রাজ্যগুলি যদি বিকশিত হয় তবেই বিকশিত ভারত গড়ে তোলা সম্ভব হবে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে রাজস্ব খাতে উপার্জন বৃদ্ধি পেলে রাজ্যকে আরো উন্নতির দিশায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। আগামী মাসেই বিধানসভায় আমাদের বাজেট পেশ হবে। রাজস্ব আয়ের উপরই মূল ভিত্তি করে বাজেট তৈরি হবে। আপনারাই আমাদের সরকারের অন্যতম অংশ। কারণ অর্থ না থাকলে কোনকিছু করা সম্ভব হবে না। যারা জিএসটি দিতে চান না তাদেরও উচিত এধরণের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা। আমরা জানি যে প্রথমে ফ্রান্স দেশে জিএসটি শুরু হয়েছিল। এরপর ক্রমান্বয়ে সেটা বিভিন্ন দেশে শুরু হয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অনেক চিন্তাভাবনার পর ২০১৭ সালে দেশে জিএসটি ব্যবস্থা শুরু করেছেন। এটা একটা পরোক্ষ কর (ইনডাইরেক্ট ট্যাক্স) ব্যবস্থা। এতে এক ছাতার নিচে এনে অনেক সুবিধা হয়েছে। বিশেষ করে ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য এই ব্যবস্থা সহায়ক হয়েছে। আমি মনে করি জিএসটি ভারতের একটা বিপ্লবী কর ব্যবস্থা।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, জিএসটি ব্যবস্থা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জনগণেরই উপকারে আসে। রাজস্ব ক্ষেত্রে আয় বৃদ্ধি পেলে পরিকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রও প্রসারিত হবে। জিএসটি করার সুবাদে স্বচ্ছতা এসেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন আমাদের রাজ্য সরকারও সেই দিশায় কাজ করার চেষ্টা করছে। আগে কি হতো – বাইরে থেকে যেমন জম্মু কাশ্মীর বা অন্যান্য রাজ্য থেকে ত্রিপুরায় গাড়ি আসলে বিভিন্ন জায়গায় তাদের কর দিতে হতো। সেই জায়গায় এখন একটাই নির্দিষ্ট অংকের কর দিতে হয়। মাঝখানে আর কোথাও দিতে হয় না। আর সেটা সম্ভব হয়েছে একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর কারণে।

মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ২০১৭ – ১৮ থেকে ২০২৩ – ২৪ পর্যন্ত জিএসটি সংগ্রহের পরিমাণ ৫১০.৭০ কোটি টাকা। এখানে আইজিএসটি ক্ষেত্রে ১০০০ কোটি টাকা পার হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের নীতি, দক্ষ প্রশাসন এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির কারণে। ২০১৮ – ১৯ অর্থবর্ষে সেস থেকে আমরা ২৭.৭৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছি। ২০২৩ – ২৪ অর্থবর্ষে এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৩৭৪.৫২ কোটি টাকা হয়েছে। ২০১৯ সালের অক্টোবরে ত্রিপুরা ইলেক্ট্রিসিটি ডিউটি চালু করা হয়েছিল। তাতেও আমাদের রাজস্ব অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ওয়ার্কস কন্ট্রাক্ট, ইট ভাট্টা, রাবার, রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্রেও জোর দেওয়া হয়েছে। এর মূল লক্ষ্যই হচ্ছে কর ব্যবস্থাকে আরো সহজ করে তোলা এবং কর যাতে ফাঁকি দেওয়া না যায়। জিএসটি এনালাইসিস এন্ড ইন্টেলিজেন্ট নেটওয়ার্ক এবং এআইও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নিয়ে আসা হয়েছে। যাতে জালিয়াতকারীদের চিহ্নিত করা যায়। পাশাপাশি ট্যাক্স ইন্টেলিজেন্ট ইউনিটের মাধ্যমে ভুয়ো রেজিস্ট্রেশন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সক্রিয় নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ট্যাক্স ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করতে বিভিন্ন পোস্ট সৃষ্টি করা হয়েছে। যেমন এসিস্ট্যান্ট কমিশনার অফ ট্যাক্সেস, স্ট্যাটিসটিকাল অফিসার, প্রোগ্রামার। এতে রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে নজরদারি বাড়ানো যাবে। জিএসটি জ্ঞান কেন্দ্র আজ চালু করার মধ্য দিয়ে করদাতাদের ট্যাক্স ফাইলিংয়ের ক্ষেত্রে অনেক সহজ হবে। অনলাইন ট্যাক্স ক্লিয়ারিং সার্টিফিকেট ক্ষেত্রে কর সংক্রান্ত প্রক্রিয়া আরো সহজ হবে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জিএসটি চালুর ফলে প্রাথমিকভাবে কর প্রদান সহজ হয়েছে। কোভিডের সময়ে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে প্রশাসনিক কার্যকর পদক্ষেপ সেটা উত্তরণ করা যায়। ত্রিপুরা রোড ডেভেলপমেন্ট সেস প্রায় ৫৮% বৃদ্ধি পেয়েছে। আবগারি ও রাজস্ব ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে আমরা অনেক সংস্কার করেছি। জিনিসপত্রে এমআরপি ভিত্তিক কর ব্যবস্থার মাধ্যমে অনেক বেশি রাজস্ব বৃদ্ধি হয়েছে। ই – আবগারি পোর্টাল চালুর মাধ্যমে রিয়েল টাইম রাজস্ব ট্র্যাকিং এবং কর ব্যবস্থা সহজ হয়েছে। আজ এখানে হলোগ্রাম চালু হয়েছে। এতে দপ্তরের পরিচিতিও পরিষ্কার হয়েছে। বর্তমান সরকার একটি শক্তিশালী কর ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা চাই আমাদের কর ব্যবস্থা খুব শক্তিশালী হোক। তবে এই ব্যবস্থা যাতে সহজ হয়। যাতে কারোর উপর চাপানো না হয়। আগামীদিনে কর নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের মাধ্যমে অধিক ব্যবসাকে জিএসটির আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে। করদাতাদের ডিজিটাল সচেতনতা আরো বাড়ানো ও ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা রোধ করা সম্পর্কে অবগত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী প্রণজিত সিংহ রায়, রাজ্য সরকারের মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, অর্থ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়, আয়কর দপ্তরের চিফ কমিশনার বিবেক এইচ বি সহ অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকগণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *