রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করছে অসম সরকার, বাজেট ভাষণে রাজ্যপাল আচার্য

কোকরাঝাড় (অসম), ১৭ ফেব্রুয়ারি (হি.স.) : রাজ্যপালের ভাষণের মধ্য দিয়ে আজ সোমবার শুরু হয়েছে অসম বিধানসভায় বাজেট অধিবেশন। বাজেট অধিবেশনে প্ৰদত্ত ভাষণে রাজ্য সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ও উদ্যোগগুলি তুলে ধরেছেন রাজ্যপাল লক্ষ্মণ প্রসাদ আচার্য। তিনি বলেন, রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করছে অসম সরকার।

অসমে এবার প্রথমবারের মতো রাজ্য বিধানসভার বাজেট অধিবেশন রাজধানীর বাইরে কোকরাঝাড়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রাজধানীর বাইরে রাজ্যের বাজেট অধিবেশন অনুষ্ঠিত হওয়ায় আনন্দ ব্যক্ত করে রাজ্যপাল আচার্য বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ জনগণকে একত্রিত করতে সাহায্য করে।

রাজ্যপাল লক্ষ্মণ প্রসাদ আচার্য বলেন, ‘এই অধিবেশন আমাদের যাত্রা সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করার, চ্যালেঞ্জ সমূহ নিয়ে আলোচনা করা এবং আমাদের প্রিয় রাজ্যের ভবিষ্যতের জন্য একটি দূরদর্শী রোডম্যাপ তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ এনে দেবে।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘সরকার তার হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করতে এমন এক ভবিষ্যত গড়ে তুলতে কাজ করছে যা রাজ্যের অতীতকে সম্মান করে এবং ইতিহাসকে অগ্রগতির সাথে মিশে সকলের জন্য মর্যাদা ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করে।’

রাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে রাজ্যপালের দাবি, ‘১২.৬ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে একটি স্থির ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে অসম।’ তিনি আরও বলেন, ‘২০২২-২৩ সালে কর রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৫ শতাংশ এবং ২০২৩-২৪ সালে তা ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।’

রাজ্যপাল আরও বলেন, ‘রাজ্যের ক্রমবর্ধমান আয় রাজ্যের অর্থনৈতিক দৃশ্যপটে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সমস্ত বিভাগ কেবল প্রবৃদ্ধির গতি বজায় রাখার জন্যই নয়. বরং একে আরও উন্নত করতে নিবিড় সমন্বয়ের সাথে কাজ করছে।’

জাগিরোডে নিৰ্মীয়মাণ সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্ৰি, ব্রহ্মপুত্র ভ্যালি ফার্টিলাইজার কর্পোরেশন লিমিটেডের অধীনে আধুনিক সার কারখানা এবং চলতি মাসের শেষের দিকে অ্যাডভান্টেজ আসাম ২.০ বিনিয়োগ ও অবকাঠামো শীর্ষ সম্মেলন, এই কয়েকটি উদ্যোগ প্রবৃদ্ধিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে মনে করেন রাজ্যপাল লক্ষণ প্রসাদ। তিনি বলেন, ‘প্রগতিশীল নীতি, কৌশলগত অবস্থান এবং বিনিয়োগ-বান্ধব বাস্তুতন্ত্রের মাধ্যমে, অসম ভারতের শিল্প রূপান্তরের পরবর্তী তরঙ্গকে এগিয়ে নিতে এবং একটি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রস্তুত।’

ইউনেসকো কৰ্তৃক চড়াইদেও মৈদামকে বিশ্ব ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থান হিসেবে মর্যাদা প্ৰদান এবং ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’ কৰ্তৃক অসমকে শীর্ষস্থানীয় বৈশ্বিক গন্তব্যস্থলের মধ্যে স্থান দেওয়া রাজ্যের জন্য ইতিবাচক অগ্রগতি বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্যপাল আচার্য।

এছাড়া নারী ও যুব ক্ষমতায়ন, কৃষি ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র, খাদ্য নিরাপত্তা ও জনসেবা প্রদান, গ্রামোন্নয়ন, স্যানিটেশন, নগরোন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সড়ক, বিদ্যুৎ এবং বন ক্ষেত্ৰের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং পরিকল্পনার বিষয়েও বক্তব্য পেশ করেছেন রাজ্যপাল।

তিনি বড়োল্যান্ড টেরিটোরিয়াল রিজিয়ন (বিটিআর), কারবি আংলং স্বশাসিত পরিষদ এবং উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের কল্যাণে গৃহীত পদক্ষেপগুলিও তাঁর ভাষণে তুলে ধরেছেন।

রাজ্যপাল আচাৰ্য বলেন, সুষম আঞ্চলিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়ন সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। ডিব্রুগড়কে রাজ্যের দ্বিতীয় রাজধানীর মর্যাদা দেওয়ার পাশাপাশি বরাক উপত্যকা উন্নয়ন বিভাগ গঠন সে দিকেই পদক্ষেপ নিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বচ্ছ শাসনব্যবস্থা, সময়ের পরিবর্তনশীল চাহিদার প্রতি দায়িত্বশীল এবং প্রতিক্রিয়াশীল করে তুলেছে।’

প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ‘আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আবারও বলতে চাই, আমার সরকার রাজ্যের সকল অঞ্চলের উন্নয়ন এবং সকল শ্রেণির ক্ষমতায়নের জন্য দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’