গুয়াহাটি, ১৫ ফেব্রুয়ারি (হি.স.) : ‘উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অন্য রাজ্যের মধ্যে অসমের স্বতন্ত্র পরিচয় এবং অর্থনৈতিক গতিপথ রয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চল মানে অসম নয়। আমি সমস্ত দূতাবাসকে অসমকে উত্তরপূর্বীয় অন্য রাজ্যের পরিস্থিতি থেকে আলাদাভাবে বিবেচনা করতে বলেছি। কারণ আমরা উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অন্য রাজ্যের দ্বারা প্রভাবিত নই, অসমকে একসারিতে বসানো ঠিক হবে না।’ বলেছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা। সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে আজ শনিবার জনতা ভবনে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বহুল প্রতীক্ষিত আসন্ন ‘অ্যাডভান্টেজ আসাম ২.০’ বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন প্রসঙ্গে বক্তব্য পেশ করছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব।
আগামী ২৫ এবং ২৬ ফেব্ৰুয়ারি গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠেয় ‘অ্যাডভান্টেজ আসাম ২.০’ শীর্ষ সম্মেলনে বিনিয়োগকারী টানতে কয়েকটি বিদেশ সফর করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিদেশ সফরকালে তিনি সব দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিনিয়োগকারীদের কাছে অসমে সম্ভাব্য উন্নত বাণিজ্যের প্রামাণিক তথ্য দিয়ছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ তিনি রাজ্যের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে নানা বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন সাংবাদিক সম্মেলনে। অসমের স্বাধীন বিনিয়োগ কৌশল এবং রাষ্ট্র-নির্দিষ্ট বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব সুরক্ষিত করার ওপর তিনি যে জোর দিয়েছেন, তা জানান মুখ্যমন্ত্রী।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির সাথে সম্পর্কিত ভ্রমণ পরামর্শ এবং তাঁর অফিসের যে কোনও সমন্বয় প্রচেষ্টা সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্ৰী ড. শৰ্মা স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার দৃষ্টি কেবলমাত্ৰ অসমের দিকে। একটি ফেডারেল সেটআপের অধীনে আমি উত্তরপূর্বীয় অন্যান্য রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করতে পারি না, বা তাদের পক্ষে সমন্বয় করার ক্ষমতা আমার নেই। এ ধরনের দায়িত্ব কেবল কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর রয়েছে। অসমের মুখ্যমন্ত্রীর উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির সঙ্গে কোনও সমন্বয়ের ভূমিকা নেই।’
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অ্যাডভান্টেজ আসাম ২০ শীর্ষ সম্মেলনের লক্ষ্য অসমের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে চালিত করতে উল্লেখযোগ্য দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা।’ প্ৰসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে ১৪৩ বিলিয়ন ডলারের গ্রস স্টেট ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট (জিএসডিপি) পৌঁছাতে রাজ্য সরকারের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যের সাথে ইভেন্টটি অসমের শিল্প সম্ভাবনা এবং পৰিকাঠামো উন্নয়ন সংক্ৰান্ত উদ্যোগগুলিকে প্রদর্শন করতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করছি।’
মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা মনে করেন, অসমের স্বতন্ত্র পদ্ধতির ওপর পূর্ব-ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে রাজ্যকে অবস্থান করতে তাঁর সরকারের বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। শীর্ষ সম্মেলনটি ভারতের অর্থনৈতিক ল্যান্ডস্ক্যাপে অসমের ক্রমবর্ধমান মর্যাদাকে শক্তিশালী করে প্রধান ব্যবসায়িক নেতা, বিনিয়োগকারী এবং নীতি স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণের সাক্ষী হবে।
ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেন, ইতিমধ্যে তিনি দেশের কয়েকটি রাজ্য সফর করেছেন, রোড শো এবং প্রথমসারির ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সফর করেছেন দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং সিঙ্গাপুর। ওই সব দেশের প্রথমসারির ব্যবসায়ী নেতৃত্বের সঙ্গে ফলপ্ৰসূ আলোচনা করেছেন। উদ্দেশ্য রূপায়ণে অসমকে নবরূপে সমৃদ্ধ করবে বলে দৃঢ় বিশ্বাস ব্যক্ত করেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী জানান, বিদেশ সফরে শতাধিক কোম্পানির নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্ৰণ জানানো হয়েছে। পৃথক পৃথক বৈঠকে অধ্যক্ষতা, সরকারি প্ৰতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎ, ঔদ্যোগিক পরিসর পরিদর্শন এবং কয়েকেট রোড শো করেছেন। যার ফলে অসমে বিনিয়োগ সম্ভাবনার প্ৰসার হবে, এটা নিশ্চিত, বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি জানান, অ্যাডভান্টেজ আাসাম ২.০ শীর্ষ সম্মেলনে প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্র মোদী ছাড়া যোগাযোগ ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ, কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী, কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল, কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রী নীতিন গডকড়ি, রেল, তথ্য ও সম্প্রচার, ইলেকট্রনিক্স এবং আইটি দফতরের মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সৰ্বানন্দ সনোয়াল, কিরেন রিজিজু, পবিত্র মার্ঘেরিটা প্রমুখ ভারত সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী এসে বিভিন্ন ইভেন্টে পৌরোহিত্য করবেন।