অশোক সেনগুপ্ত
(প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ থেকে)
প্রয়াগরাজ, ১২ ফেব্রুয়ারি (হি.স.): মহাকুম্ভের নগরীতে সমুদ্রমন্থন দ্বারের কাছে রাস্তার বাঁ ধারে বছর ছয়ের এক বালিকা দড়ির খেলা দেখাচ্ছে। রোজ সকাল থেকে সন্ধ্যা, নিচে দাঁড়িয়ে ডুগডুগি বাজাচ্ছে ওর বাবা। সঙ্গমমুখী রাস্তার ধরে মিনিট পাঁচ এগোলে এরকমই আর এক ‘বাঞ্জারা’ রোজ দড়ির ওপর ওঠে রোজ সকাল সাতটায়। ওর বিশেষত্ব হাঁটু মুড়ে বসা। মনে হয়, পায়ের একটা অংশ নেই। নিচে পাহারাদার ওর মা।
এই দুই বালিকার মত হরেক পেশার, নানা ধরণের মানুষ মহাব্যস্ত প্রয়াগের মহাকুম্ভে। যেমন আর এক বালিকা অনামিকা। রাস্তার ধারে বসে বিক্রি করছে শক্ত কাগজের তৈরি নৌকোর আদলে নাইয়া। প্রতি ‘নাইয়া’-তে কিছু লাল-হলুদ ছোটো গাঁদা, মাঝে মাটির প্রদীপ, ধারে আগরবাতি লাগানোর জায়গা। প্রতিটির দাম ২০ টাকা। দিনে কয়েকশো টাকা উপার্জন।
সঙ্গম যাওয়ার পথে রাস্তার ধারে হাজার রকম বিক্রেতা। হরেক রঙের, হরেক মাপের রুদ্রাক্ষের মালা, গেরুয়া পতাকা, রামের নাম লেখা পাঞ্জাবি, মূর্তি, দেবতার বিশেষ ধরণের প্রসাদের মোড়ক— এ সব যেমন আছে, তেমনই আছে আইসক্রিম, খেলনা, মেয়েদের সাজগোজের জিনিস প্রভৃতি। মহাকুম্ভ উপলক্ষে কী হকার, কী বড় দোকান প্রত্যেকের ব্যবসা রীতিমত বেড়ে উঠেছে। উল্লেখযোগ্য বেড়েছে হোটেল, রেস্তোঁরা, হোম স্টে-র ব্যস্ততা ও আয়।
পুণ্যার্থীরা অনেকে এসে ধাতব টাকা/পয়সা ফেলছেন জলে। কত টাকা মোট জলে যাচ্ছে, তার হিসেব কে রাখেন? কিন্তু বেশ কিছু লোক বা ছেলে ব্যস্ততাময় হাঁটুজল থেকে কাদা ছেঁচে সেই পয়সা তোলা। কপাল ভালো থাকলে, মহাকুম্ভের এক পুণ্যদিনেই কয়েকশো টাকা তুলছেন।
মহাকুম্ভ মেলা ভারতের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব এবং লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। ২০২৫ সালের মহাকুম্ভ মেলা থেকে প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে বলে উত্তর প্রদেশ সরকার আশা প্রকাশ করেছে। কীভাবে রাজস্ব আয় করছে? পরিষেবার জন্য পরিবহন, খাদ্য, আবাসন, খুচরা বিক্রয় এবং অন্যান্য পরিষেবার জন্য মানুষ খরচ করছে। নানা ধরণের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কুম্ভমেলা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। ব্র্যান্ডিং অধিকার আইটিসি, কোকা-কোলা এবং আদানি গ্রুপের মতো ব্র্যান্ডগুলি ₹৩৬০০ কোটি টাকার ব্র্যান্ডিং অধিকার কিনে নিয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, ২০১৯ সালের কুম্ভমেলায়, দর্শনার্থীদের দৈনিক গড়ে জনপ্রতি খরচ ছিল ₹৩০০-₹৫০০, যা স্থানীয় ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। ২০২৫ সালের জন্য মুদ্রাস্ফীতি-সমন্বিত খরচের সাথে সংখ্যাটি জনপ্রতি দৈনিক ₹৬০০-₹৭৫০-এ উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এসবের ফল অর্থনৈতিক প্রভাবকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
অনুষ্ঠান চলাকালীন জাল নোটের প্রচলন নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, কারণ সম্প্রতি প্রয়াগরাজ থেকে মাত্র ২৬৫ কিলোমিটার দূরে শ্রাবস্তীর একটি মাদ্রাসা থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে জাল নোট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। মহাকুম্ভের সময় কোটি কোটি টাকা বিনিময় হওয়ার সম্ভাবনা থাকায়, কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে দেখেছে যে আর্থিক কার্যকলাপে জাল নোটের চালানোর উদ্দেশ্যে ছিল।
সব মিলিয়ে প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভ তৈরি করতে চলেছে অনন্য অর্থনীতির নজির ।