পিএম সূর্য ঘর মুফত বিজলী যোজনায় সুবিধাভোগী হয়ে বিদ্যুৎবিলকে শূন্যে নামিয়ে আনার আহ্বান বিদ্যুৎমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৭ ফেব্রুয়ারি:
বিদ্যুতের বিল নিয়ে চিন্তার দিন শেষ। এবার বিদ্যুৎ কে ব্যবহার করে বাড়তি রোজগারও করতে পারবেন যেকোনো নাগরিক। পাশাপাশি বিদ্যুতের বিল প্রায় শূন্যে নেমে আসবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশবাসীর কথা চিন্তা করে এমন এক প্রকল্প নিয়ে এলেন গোটা দেশে, যা কোটি কোটি মানুষকে বিদ্যুৎ বিলের চিন্তা থেকে মুক্তি দিয়েছে। পিএম সূর্য ঘর মুফত বিজলি যোজনা এমনই এক জনমোহিনী যোজনার নাম। রাজ্যের আপামর বিদ্যুৎ ভোক্তাদেরকে পিএম সূর্য ঘর মুফত বিজলী যোজনায় সুবিধাভোগী হয়ে বিদ্যুৎ বিলকে শূন্যে নামিয়ে আনার আহ্বান জানালেন বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ।

শুক্রবার আগরতলায় ক্যান্সার হাসপাতালের উল্টো দিকে জিবি বিদ্যুৎ সাব ডিভিশন সংলগ্ন মাঠে ক্যাপিটেল কমপ্লেক্স বিদ্যুৎ ডিভিশন কর্তৃক আয়োজিত পিএম সূর্য ঘর মুফত বিজলি যোজনা শিবিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এই তথ্য জানান বিদ্যুৎ মন্ত্রী। তিনি বলেন, আগামী দিনে কয়লা শেষ হয়ে যাবে, গ্যাস শেষ হয়ে যাবে , ফলে প্রথাগত বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাবে। সে কথা মাথায় রেখেই প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এবার সূর্য শক্তিকে ব্যবহার করে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবার। শুধু তাই নয়, তিনি এক আশ্চর্য পরিকল্পনায় প্রতিটি পরিবারকে সরকারি ভর্তুকি সহ বিদ্যুৎ উৎপাদক হিসেবে গড়ে তুলে বিদ্যুৎ নিগমের কাছে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিক্রির মাধ্যমে উপার্জনের এক অপূর্ব সুযোগ এনে দিয়েছেন।

শুক্রবার ক্যাপিটাল কমপ্লেক্স বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত এই বিশেষ শিবিরে বিদ্যুৎ মন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুর নিগমের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কর্পোরেটরগন। উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক অধিকর্তা বিশ্বজিৎ বসু। বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে উৎসাহী মানুষেরা এদিন প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত জানতে ভিড় জমিয়েছেন। এই বিশেষ শিবিরে সোলার প্যানেল প্রতিস্থাপনকারী সরকার অনুমোদিত বিভিন্ন কোম্পানির লোকজনেরা এবং বিভিন্ন ব্যাংকের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পিএম সূর্য ঘর মুফত বিজলি যোজনার সূচনা করেন। যে প্রকল্পের লক্ষ্য আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ গিগাওয়াট বিদ্যুতের পরিকল্পনা। এখন পর্যন্ত দেশে ২০০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ। যা লক্ষ্যমাত্রার ৪০ শতাংশ ।

এই প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে মন্ত্রী আরো বলেন, এই প্রকল্পটি বাড়ির ছাদ, টিনের চাল কিংবা মাটিতেও পাটাতনের উপর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। প্রকল্পের লক্ষ্য হল, বাড়ির ছাদ কেন্দ্রিক সৌর বিদ্যুতের ক্ষমতা বাড়ানো এবং পরিবার গুলিকে তাদের নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম করা। গৃহস্থালী ক্ষেত্রে এই উদ্যোগটি ২০২৩-২৪ অর্থবছর (১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ থেকে শুরু) থেকে ২০২৬-২৭ অর্থবছর পর্যন্ত চলবে। এই সময়কাল পর্যন্ত সরকারি ভর্তুকি প্রদান করা হবে। এতে মোট আর্থিক ব্যয় হবে ৭৫,০২১ কোটি টাকা। এই প্রকল্পে সুবিধাভোগীদের ভর্তুকির বিষয়টির ব্যাখ্যা করে রতন বাবু জানান, আবাসিক সেক্টরে প্রথম ২ কিলো ওয়াট ক্ষমতা সোলার প্যানেল বসানোর ক্ষেত্রে প্রতি কিলোওয়াট এর জন্য ভর্তুকি ৩৩ হাজার টাকা। প্রথম ২ কিলো ওয়াট সোলার প্যানেল বসানোর পর পরবর্তী ১ কিলো ওয়াট সোলার প্যানেল বসানোর ক্ষেত্রে ভর্তুকি মিলবে ১৯ হাজার ৮০০ টাকা। ৩ কিলো ওয়াট সোলার প্যানেলের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ভর্তুকি ৮৫,৮০০ টাকা। রেসিডেন্সিয়াল সেক্টরে ৩ কিলো ওয়াট সোলার প্যানেল বসানোর পর পরবর্তী সোলার প্যানেল বসানোর ক্ষেত্রে অর্থাৎ কিলোওয়াট বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আর কোন ভর্তুকি মিলবে না। হাউসিং সোসাইটি/ রেসিডেনশিয়াল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ইত্যাদির ক্ষেত্রে এবং ইলেকট্রিক্যাল ভেহিকেল চার্জিং এর ক্ষেত্রে ৫০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত সোলার প্যানেল বসাতে পারবেন। এ জন্য ভর্তুকি পাওয়া যাবে প্রতি কিলো ওয়াটে ১৯,৮০০ টাকা। প্রতিটি পরিবার সর্বোচ্চ ৩ কিলোওয়াট পর্যন্ত সৌর প্যানেল স্থাপন করতে পারবেন। নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ যে কোন ভোক্তা ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করতে পারবেন বলেও মন্ত্রী এদিন জানিয়েছেন।

তিনি জানান যে কোন ব্যক্তি তার নিকটবর্তী বিদ্যুৎ নিগম কার্যালয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন। এই প্রকল্পে প্রত্যেক আগ্রহী ব্যক্তিকেই ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ লিমিটেডের আধিকারিকরা সর্বতোভাবে সহযোগিতা করবেন। এ দিনের শিবিরে প্রায় আড়াইশো মানুষ পিএম সূর্য ঘর মুফত বিজলি যোজনায় নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *