ধর্মনগর, ৫ ফেব্রুয়ারি : বিএমএস-এর দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব অবশেষে রূপ নিল সরাসরি সংঘর্ষে। এতে উত্তপ্ত হয়ে উঠে গোটা ধর্মনগর। ঘটনার ফলে শহরে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক, আর পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার। বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়ন করা হয়েছে শান্তি বজায় রাখতে, তবুও উত্তেজনা কমার লক্ষণ নেই।
কয়েক মাস আগে বিএমএস (ভারতীয় মজদুর সংঘ) বিভক্ত হয়ে যায় দুটি গোষ্ঠীতে। একদিকে ছিলেন সংগঠনের প্রাক্তন জেলা সভাপতি বিপ্লব দাস, অন্যদিকে নেতৃত্বে উঠে আসেন অনুপ পাল। নেতৃত্বের এই দ্বন্দ্ব ধীরে ধীরে রূপ নেয় শত্রুতায়। অভিযোগ, বিপ্লব দাস এবং তার অনুগামীরা তাদের আধিপত্য ধরে রাখতে প্রতিপক্ষের কর্মীদের ভয় দেখানো ও হুমকি দেওয়া শুরু করেন। প্রতিদিনই কোনো না কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছিল, যা সংগঠনের মধ্যকার উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলছিল।
এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে আজ রাস্তায় নামে অনুপ পালপন্থী কর্মীরা। তারা শ্রমিক শোষণ বন্ধ, শহরে গুন্ডারাজের অবসান, নিরীহ ব্যবসায়ীদের উপর হামলা রোধ এবং সাধারণ শ্রমিকদের সুরক্ষার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। তাদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেন সারা ভারত প্রাইভেট ট্রান্সপোর্ট সংঘের সভাপতি অসীম দত্ত ও ত্রিপুরা প্রাইভেট ট্রান্সপোর্ট সংঘের সাধারণ সম্পাদক বীরেশ দেবনাথ।
বিক্ষোভকারীরা ধর্মনগর মহকুমা অফিসের সামনে ধরনা কর্মসূচি পালন করেন। পরে অনুপ পাল, বীরেশ দেবনাথ ও অসীম দত্তের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মহকুমা শাসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। তারা স্পষ্ট জানান, যতদিন বিপ্লব দাস ও তার অনুগামীদের অত্যাচার বন্ধ না হবে, ততদিন ধর্মনগরে কোনো ধরনের ট্রাক চলাচল করতে দেওয়া হবে না। মহকুমা শাসক দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
মহকুমা অফিসে ধরনা কর্মসূচি শেষ করে বীরেশ দেবনাথ যখন তার বঠরশি এলাকার বাড়িতে ফেরেন, তখনই বিপ্লব দাস ও তার অনুগামীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। বিক্ষোভকারীদের প্রচার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়, মারধরের ঘটনাও ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান জেলা পুলিশ সুপার এবং বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়ন করা হয়।
এদিকে, শুধু বঠরশি এলাকাতেই নয়, ধর্মনগরের বিভিন্ন অংশে বিপ্লব দাসপন্থীরা হামলার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বীরেশ দেবনাথ। সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, আর স্থানীয় বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন, এই দ্বন্দ্ব আরও বড় সংঘর্ষের রূপ নিতে পারে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে পুলিশ প্রশাসন, তবে ধর্মনগরের বাতাস এখনো থমথমে।