নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর আদর্শ, জীবন, কর্মধারা ও দেশপ্রেম যুব সমাজকে আরো অনুপ্রাণিত করবে : মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ২৩ জানুয়ারি: নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর আদর্শ, জীবন, কর্মধারা ও দেশপ্রেম যুব সমাজকে আরো অনুপ্রাণিত করবে। তরুণ ও যুব সমাজের কাছে প্রেরনা তিনি। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একজন চির স্মরণীয় কিংবদন্তি নেতা ও একজন আপোষহীন যোদ্ধা তিনি। ২৩ জানুয়ারি ভারত মাতার বীর সন্তান নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৯তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আগরতলার নেতাজী সুভাষ বিদ্যানিকেতনে আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। 

এদিন অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। পরে আকাশে রং বেরঙের বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ১৯৫১ সাল থেকে এই স্কুলে এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতা আজও বিদ্যমান রয়েছে। ছোটবেলা থেকেই এই স্কুল থেকে আয়োজিত শোভাযাত্রা দেখার জন্য আমরা অপেক্ষায় থাকতাম। 

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একজন চির স্মরণীয় কিংবদন্তি নেতা নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু। এমন একজন উজ্জ্বল ও মহান চরিত্রের ব্যক্তিত্ব স্বাধীনতা আন্দোলনে খুব কমই দেখতে পাই। ভারতকে স্বাধীন করার জন্য তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। দেশের জন্য অন্তর থেকে কাজ করেছেন তিনি। দেশের জন্য কাজের মধ্য দিয়ে তিনি সবার হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। আমরা জানি নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু কংগ্রেস দল থেকে বেরিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লক নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন। তিনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি দাবি করেছিলেন পূর্ণ স্বাধীনতা। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাঁকে ১১ বার কারারুদ্ধ করেছিল। কিন্তু তাঁকে কোথাও আটকে রাখতে পারে নি তারা। এমন একজন বীরপুরুষ ছিলেন তিনি। আমরা ছোটবেলা থেকেই তাঁর বীরগাথা শুনে এসেছি। তাই বারবার তাঁর সম্পর্কে জানতে ইচ্ছে হয়। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের সুভাষচন্দ্র বসু সম্পর্কে আরো বেশি করে জানতে হবে। 

অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ভারতবর্ষকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আর এমন একজন বীর নেতা সম্পর্কে আরো বেশি করে জানলে আমরা আরো এগিয়ে যাবো। উনার চির অমর উক্তি এখনো প্রতিটি মানুষ মনে রেখেছে। সেই অমর উক্তি হচ্ছে – ‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা এনে দেবো’। এখনো আমাদের মনে সেটা চির স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ব্রিটিশদের দুর্বলতা অনুভব করে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়ন, জার্মান ও জাপানে চলে যান। তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল এই সুযোগকে ব্যবহার করে যদি ব্রিটিশদের ভারত থেকে তাড়িয়ে দেওয়া যায় এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে সেটা সম্ভব হবে। তাই জাপানিদের সহযোগিতায় তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজ পুনর্গঠন করেন। বলতে গেলে ভারতের প্রথম যে সরকার আজাদ হিন্দ সরকার তাঁর নেতৃত্বেই শুরু হয়েছিল। জাপানের আর্থিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক সহায়তায় তিনি আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। আজাদ হিন্দ ফৌজ নিয়ে ইম্ফল পর্যন্ত চলে এসেছিলেন তিনি। সুভাষচন্দ্র বসু চেয়েছিলেন ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা। তিনি ছিলেন একজন আপোষহীন যোদ্ধা। তরুণ ও যুব সমাজের কাছে প্রেরনা তিনি। আগামীদিনে তাঁর আদর্শ, জীবন, কর্মধারা ও দেশপ্রেম যুব সমাজকে আরো অনুপ্রাণিত করবে। 

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নেতাজী সুভাষ বিদ্যানিকেতন একটি বনেদি স্কুল। বহু কৃতি ছাত্রছাত্রী এখান থেকে বেরিয়ে ত্রিপুরা সহ দেশ ও বিদেশেও সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। আর এই স্কুলের সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে শৃঙ্খলা। খেলাধুলা থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক চর্চা ও নানা বিষয়ে এই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সুনাম রয়েছে। এমন একজন মনিষী ও দেশপ্রেমিকের নামে এই স্কুল। অথচ এতদিন ধরে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দেওয়া হয় নি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বর্তমান সরকার তাঁকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান দিয়েছে। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০২১ সালে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনকে স্মরণীয় করে রাখতে এই দিনটির নাম পরাক্রম দিবস হিসেবে রেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। 

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুর নিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার, পুর নিগমের সেন্ট্রাল জোনের চেয়ারম্যান রত্না দত্ত, স্কুলের পরিচালন কমিটির সহ সভাপতি ড. দিলীপ কুমার দাস, সেক্রেটারি তপন চক্রবর্তী, স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মীনা রানী কলই সহ অন্যান্যরা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরপরই স্কুলের ময়দান থেকে সুসজ্জিত শোভাযাত্রা বের হয়ে রাজধানী শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *