আগরতলা, ১৫ জানুয়ারি : ত্রিপুরায় মন্ত্রি, বিধায়ক এবং বিধানসভার প্রাক্তন সদস্যদের বেতন ও পেনশনে প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি হয়েছে। অবশ্য, বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী ওই বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাবে কৌশলী বিরোধীতা করেছিলেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, হটাৎ ওই বৃদ্ধিতে রাজ্যের জনসাধারণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে। কিন্তু, বিরোধী কংগ্রেস ওই বেতন বৃদ্ধির প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছেন। কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ প্রস্তাব দেন, ইচ্ছে হলে বাড়তি আর্থিক সুবিধা ছাড়তে পারেন, বিলে সংশোধনী এনে সেই ব্যবস্থা রাখা হোক। অবশেষে, সর্বসম্মতিক্রমে বিধানসভায় ওই বিল পাস হয়েছে।
“বিধায়ক, মন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলনেতা, সরকারী চিফ হুইপ এবং অন্যান্য সদস্যদের বেতন, ভাতা, পেনশন ও অন্যান্য সুবিধা (ত্রিপুরা) (নবম সংশোধনী) বিল, ২০২৪” শিরোনামের এই বিলটি বেশ কিছু প্রধান ক্ষেত্রে বেতন ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। ওই বিল আজ পাস হয়েছে।
বিল অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রী এখন থেকে ৯৭,০০০ টাকা বেতন পাবেন, উপ মুখ্যমন্ত্রীর বেতন হবে ৯৬,০০০ টাকা। অন্যান্য মন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধী দলনেতা এবং সরকারী চিফ হুইপের বেতন হবে ৯৫,০০০ টাকা। ডেপুটি স্পিকারের বেতন মন্ত্রীদের থেকে ১,০০০ টাকা কম এবং বিধায়কদের বেতন হবে ৯৩,০০০ টাকা। মুখ্যমন্ত্রীর জন্য বিনোদন ভাতা ১৩,০০০ টাকা এবং অন্যান্যদের জন্য ১২,০০০ টাকা নির্ধারিত হয়েছে।
বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৯ সালে প্রথম বেতন ও ভাতা বৃদ্ধি কার্যকর হয়। তখন মুখ্যমন্ত্রীর বেতন ছিল ৫৩,৬৩০ টাকা এবং উপ মুখ্যমন্ত্রীর বেতন ছিল ৫২,৬৩০ টাকা। অন্যান্য মন্ত্রী, স্পিকার এবং বিরোধী দলনেতার বেতন ছিল ৫১,৭৮০ টাকা। চিফ হুইপ ৫০,৫১০ টাকা এবং বিধায়কের বেতন ছিল ৪৮,৪২০ টাকা।
নতুন বিলটি বিধানসভার সদস্যদের জন্য ভ্রমণ এবং দৈনিক ভাতা বাড়িয়েছে। ভ্রমণ ভাতা প্রতি কিলোমিটার ২৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫ টাকা করা হয়েছে। দৈনিক ভাতা ত্রিপুরার মধ্যে ১,১০০ টাকা এবং ত্রিপুরার বাইরে ১,৫০০ টাকা করা হয়েছে।
পেনশন সংক্রান্ত একটি বড় পরিবর্তনও বিলটিতে রয়েছে। প্রাক্তন বিধায়কদের পেনশন ৩৪,৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৬,০০০ টাকা করা হয়েছে। পারিবারিক পেনশনও ২৫,০০০ টাকা থেকে ৪৮,০০০ টাকা করা হয়েছে।
বিলটি পেশ করে সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেছিলেন, বেতন, ভাতা ও পেনশনের এই সংশোধনী প্রয়োজনীয়। কারণ মূল্যসূচকের বৃদ্ধি হয়েছে এবং কর্মচারীদের বেতন কাঠামোও উন্নত হয়েছে। এটি কার্যকর হলে প্রায় ১১ কোটি টাকার অতিরিক্ত ব্যয় হবে।
নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, মন্ত্রি এবং বিধায়করা এখন থেকে ত্রিপুরার একজন দক্ষ কর্মীর মাসিক মজুরির আট গুণ বেশি উপার্জন করবেন। ত্রিপুরা শ্রম দপ্তরের সরকারি ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ত্রিপুরায় একজন দক্ষ কর্মী মাসে ১১,৭৯৭ টাকা পেতে পারেন।
শুক্রবার বিলের সমর্থনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন, “এই ধরনের বৃদ্ধির পরেও বিধায়ক এবং মন্ত্রীদের আর্থিক সুবিধা এখনও দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন। রেকর্ড অনুযায়ী, দেশের মধ্যে তেলেঙ্গানা আইন প্রণেতাদের সর্বাধিক আর্থিক সুবিধা প্রদান করে।”
একটি তথ্য তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, “১৯৬৩ সালে প্রথম বিধানসভা থেকে এখন পর্যন্ত ৭৪৮ জন বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। সেই সময় এটি একটি ৩০ সদস্যের বিধানসভা ছিল। প্রায় ৮২জন বিধায়কের পরিবারের সদস্যরা পারিবারিক পেনশন পাচ্ছেন। অনুরূপভাবে, প্রায় ১০০ জন প্রাক্তন বিধায়ক পেনশন পাচ্ছেন। কিন্তু, তাঁরা খুবই সামান্য আর্থিক সুবিধা পেনশন বাবদ পেতেন, তাতে তাঁদের জীবিকা নির্বাহ দুর্বিষহ ছিল। এই বিলে পেনশন বাড়ানো হয়েছে। সাথে তিনি যোগ করেন, আমরা সমস্ত মানদণ্ড শিথিল করেছি কারণ একজন বিধায়ক যদি একদিনের জন্যও বিধানসভার সদস্য হন, তবে তাঁর জনগণের জীবনে অবদান রয়েছে এবং তাই তিনি পেনশনের অধিকারী হওয়া উচিত।”
মন্ত্রী বলেন, একজন বিধানসভা কেন্দ্রের অভিভাবক হিসেবে বিধায়ক কিছু দায়িত্ব নেওয়া থেকে পিছিয়ে থাকতে পারেন না। “দরিদ্র পরিবারের বিয়েতে একজন বিধায়কের কাছ থেকে মানুষ আশা করেন। কখনও কখনও পরিবারের কাছে শেষকৃত্যের জন্য কিছুই থাকে না এবং তারা আশা করেন বিধায়ক তাঁদের সাহায্য করবেন। রতন লাল নাথের মতে, মন্ত্রী এবং বিধায়কদের আর্থিক সুবিধা বাড়ানো না হলে বিধানসভা কেন্দ্রের অভিভাবক হিসেবে তাঁদের দায়িত্ব পালনের জন্য দুর্নীতিতে লিপ্ত হতে হবে।
এদিকে, এই বিলের বিরোধিতা করে বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, বিধায়ক এবং মন্ত্রীরা সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণীতে পড়েন। কারণ তাঁরা তাঁদের নিজস্ব বেতন এবং অন্যান্য ভাতা সংশোধন করার ক্ষমতা রাখেন। ভারতের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী প্রয়াত অরুণ জেটলির দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এখন মন্ত্রী এবং সাংসদরা আর তাঁদের নিজস্ব বেতন এবং ভাতা সংশোধন করার ক্ষমতা রাখেন না। আমি বেতন এবং সুবিধা বৃদ্ধির বিরোধী নই তবে এটি যুক্তিসঙ্গতভাবে করা উচিত যাতে এটি দৃষ্টিকটূ না হয়।”
কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন বলেন, বিধায়কদের তাদের বেতন ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি দেয় বিলে এমনই একটি বিধান অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। তিনি রাজ্য বিধানসভার চিকিৎসা ক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের জন্য কঠোর ব্যবস্থা প্রবর্তনের আহ্বান জানান। অন্যদিকে, পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী প্রস্তাবিত বৃদ্ধির বিরোধিতার জন্য বিরোধীদের সমালোচনা করেন।